• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

অনেক দিন পর


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০:৩২ এএম;
অনেক দিন পর
অনেক দিন পর

ফয়সল জেহিন তারা দুই বন্ধু, যেন-তেন নয় আত্মার আত্মীয় তারা। জেহিন খুব বড় লোক। ফয়সল গরীব ঘরের ছেলে। সুখ দু:খ ও ছেলেমানুষী দুজনেই নিতো ভাগ করে। একদিন ফয়সল জেহিনকে বললো বন্ধু আমার জন্য দোয়া করিস। জেহিন জানতে চাইলো কেন কি হয়েছে ?  ফয়সল জবাব দিলো, না কিছু হয়নি, তবে মনে হয় তোর সাথে আর দেখা হবে না। কেন হবে না তা তো বলবে। একটা খুশির খবর আছে বললো ফয়সল। ঠিক আছে খুশির খবরটা কি বল শুনি। বলবো …বলবো…।.

হ্যাঁ, বল কি এমন খুশির খবর। খবরটা হচ্ছে আমি বিদেশ চলে যাচ্ছি। জেহিন জানতে চাইলো কোন দেশে, কবে যাচ্ছিস?  ফয়সল : সম্ভবত আগামী বিশ তারিখে। বন্ধু দোয়া করিস তিন-চারটা বছর পরে ফিরে আসবো। জেহিন: দোয়াতো অবশ্যই করবো, তোর আশাটা পূর্ণ হোক, শরীরের প্রতি খেয়াল রাখিস, খালা-খালুকে বেশি করে টাকা পাঠাস। জেহিন : কি যে বলিস না, আমি তো শুধুমাত্র তাদের জন্যই বিদেশ যাচ্ছিরে! মা বাবা আমাকে কতো কষ্ট করে লালন পালন করেছন। আমাদের অভাবের সংসার, বাবা মা নিজে না খেয়ে আমাকে খাইয়েছেন। বাবার অসুখী শরীর, তার পর শেষ সম্বলটুকু…বলে থেমে গেল ফয়সল।  .

জেহিন কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলো শেষ সম্বল মানে-তুই কি করেছিস? না-না কিছু করিনি-মানে আমাদের ঐ ক্ষেতের জায়গাটুকু বিক্রি করে বাবা টাকা যোগাড় করেছেন। জেহিন বললো ঐ জমিটা বিক্রি না করলে পারতে না। ফয়সল : না, অনেক চেষ্টা করেছি, পারিনি। জেহিন বললো প্রবাসী ব্যাংকে গিয়েছিলে? ফয়সল হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। ব্র্যাকে গিয়েছিলে। হ্যাঁ, ব্র্যাক ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, যুব উন্নয়ন ব্যাংক, সহ অনেক আত্মীয়ের কাছে ও পাইনি। জেহিন বললো ব্যাংক টাকা দেবার কথা দিলো না কেন? ফয়সলের মাথায় আগুন জ্বলে উঠে, সে নেতার মতো বক্তব্য দিতে থাকে। শুনো জেহিন, আমরা এমন এক দেশে বাস করছি, যেখানে আইন এক-বাস্তবায়ন আরেক, নির্দেশ এক- পালন আরেক। ব্যাংক আছে কিন্তু গরীবের জন্য নয়, ঐ ব্যাংকগুলো তাদের কে ঋণ দেবে যার হাজার কোটি টাকার সম্পদ আছে, বাড়ি আছে, গাড়ি আছে। ব্যাংক তাদের কে ঋণ দেবে যার জমি আছে, প্রভাব প্রতিপত্তি আছে, যার ব্যবসা বাণিজ্য আছে, (যেমন তেলির মাথায় তেল দেওয়া)। যার নেই তাদের দেবার কথা থাকলেও সে পাবে না। যে উৎকোচ দিবে সে পাবে, যে উৎকোচ দেবে না সে পাবে না। তুই জানিস না !.

আমি আমাদের বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে ব্র্যাক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, যুব উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও সিলেটের প্রবাসী ব্যাংক সহ কত দেখেছি কিন্তু ঋণ পাইনি। ব্র্যাক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ভিসার কপি নিয়ে আমাকে দু-দিন ঘুরিয়েছে অথচ ঋণ আমাকে দেয়নি। বরংচ হারামজাদারা যত্রতত্র বিদেশ গমেনিচ্ছুকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হয়, এভাবে লিখে লিখে দেয়ালে দেয়ালে লিফলেট টানিয়েছে। যাক শেষ পর্যন্ত জমিটুকু বিক্রি করে টাকা যোগাড় করেছি। জানি না ওখানে যাবার পর কি হবে। দোয়া করিস কাজ পেলে মন দিয়ে কাজ করবো, আমার টাকা চাই, অনেক টাকা! টাকারতো কতো প্রয়োজন তা তো তুই নিজেই দেখছিস।.

রিনা, ঝরনা স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। ওদের স্কুল ড্রেসগুলো খুব পুরনো হয়ে গেছে। স্কুল বেতন বকেয়া পড়েছে কয়েক মাসের। ফয়সলের কথা শুনে জেহিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রইলো। সে ও ভাবছে আমাদের সমাজের পরির্বতন কবে হবে ? ফয়সলকে টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করতে স্বাদ জাগলো, কিন্তু সে তা পারবে না, কারণ:তার বিশাল ধন সম্পদের মালিক এখনো তাঁর বাবা। কিপটে ধনিতে সমাজ সয়লাব হয়ে গেছে। আর কাউকে যদি দু-চার টাকা দান খয়রাত করতে হয়, করেন -তবে দানের চেয়ে সাংবাদিক-দের ফটো তোলার সংখ্যাই বেশি হয়। পত্রিকায় নিউজ না এলে দান খয়রাতের হাত গুটিয়ে নিয়ে সংবাদ কর্মীদের উপর থাকেন রেগে অগ্নিগিরির মতো।.

জেহিন: ফয়সলকে বললো বন্ধু তুই সুখী হ ' আমি তোর মঙ্গল কামনা করি। হ্যান্ডসেক করে বিদায় নিয়ে জেহিন চলে গেলো। অনেকটা নিজে নিজের উপরই রেগে যাবার মতো দেখালো জেহিন কে। ভাগ্য বদলানোর আশাতে দেশের হাজার হাজার মানুষ প্রবাস নামক বৈরিতে খেয়ে না খেয়ে বছরের পর বছর যুগের পর যুগ পড়ে আছে। বিপদে-আপদে নানান প্রতিকূলতায় তাদের পাশে কেউ থাকে না। বিভিন্ন দেশে ভিসা সমস্যা, পাসপোর্ট সমস্যা, বেতন ভাতা ও নিয়োগকৃত কর্ম প্রতিষ্ঠানের অনিয়মে আমাদের বাঙালিরা বিদেশের যন্ত্রণা চোখ বুজে সেখানে হজম করেন, তবুও দেশ দশের জন্য তাঁরা নিবেদিত প্রাণ। দেখতে দেখতে ফয়সলের বিদেশ যাবার দিন তারিখ সন্নিকটে চলে এলো। জন্মভূমি মা মাটি ও ভাই বোন আত্মীয়স্বজন ছেড়ে তাকে সাত সমুদ্রের ওপারে যেতে হচ্ছে রুটি রুজির সন্ধানে।.

পরবাসে যেতে মন চায়না তবো যেতে হয়। হাজার কষ্টের মাঝেও আমাদের বাঙালিরা একটু সুখের স্বপ্ন দেখে, দেখে তাঁর সামনে সুখের দিগন্ত হাতছানি দিচ্ছে। দু:খের দিনগুলো তাড়িয়ে সোনালী সূর্য্যালো তার জীর্ণ কুটিরে প্রবেশ করছে। পরিজন নিয়ে সুখে থাকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে প্রবাসীরা স্বীকার করে নেয় জেল জুলুম, অত্যাচার, অবিচার, স্বজন ছেড়ে দূরে থাকার মনোবেদনা অমৃত ভেবে নিজের ঘাড়ে। ফয়সল সে সব সত্য-কে বুকে চেপে আবুধাবীর দিকে পা বাড়ায়। যাত্রা কালে মা বাবার উপদেশ গুলো মন দিয়ে শুনে নেয়। ওখানে যাবার পর রীতিমত খাওয়া দাওয়া করিস, শরীরের প্রতি যত্ন নিস ইত্যাদি। বাবা মা এক ভাই ও ছোট দু-বোন প্লেন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলো।.

ফয়সল পরদিন আবুধাবি পৌছে মা বাবা-কে ফোনে জানায় সে আবুধাবি পৌছে গেছে। বাড়ির সকলেই শুনে খুশি হয়। ফয়সলের আরেকটি কঠিন সংগ্রামের জীবন শুরু হলো। যে তাকে ভিসা দিয়ে নিয়েছে সে তাকে আবুধাবির কোম্পানিতে দিয়ে চলে গেছে। পরবাসে ভিন্ন দেশে অচেনা-অজানা কথাবার্তা না জানা অবস্থায় তার কাজের ময়দানে যুদ্ধ করতে প্রস্তুতি গ্রহণ ছাড়া কোন উপায় নেই। সে দেখতে পায় আশপাশের আরো অনেকেই (দেশি বিদেশি) লোক কাজ আর কাজ করেই যাচ্ছে।  কাজ শেষ হলেই বাসায় কিংবা ম্যাসে ফিরে ডাল-চাল রুটি পাক করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হয়। সকালে নাস্তা করেই কাজের মাঠে হাজির হয়ে দিনভর কাজ সেরে সন্ধ্যে হলে থাকার স্থানে ফিরে আসা।.

এ রকম শুধু তাদের জন্য যাদের পারমানেন্ট কাজের বন্দোবস্ত আছে। কেউ আবার নিজের ইচ্ছামতো কাজ খোঁজে কাজ করে থাকে। এমনি ভাবে ফয়সলের মাস গড়িয়ে যায়। মাস শেষে সে প্রথম বেতন(মজুরি) পায় মাত্র পনের হাজার টাকা। সে বুঝতে পারে না যে তাকে ভিসা দিয়ে নিয়েছে সে বলেছিলো পঁচিশ হাজার টাকা থাকবে মাসের বেতন। বাকি টাকা কোথায় গেল! এ্যাকামা নামক কাজের বন্দোবস্ত থাকবে দু-বছরের। তা হয়েছে মাত্র এক বছরের। এত সব জানতে পারে তখন, যখন সে আবুধাবির ভাষা, কথা-বার্তা  কিছু কিছু শিখেছে ও এ্যাকামার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর।.

মেয়াদ শেষ হলে কোম্পানির মালিক বলেছে তোমার এ্যাকামা রিনিউ করতে হবে। ফয়সল বুঝে উঠতে পারেনা ভিসা দাতা কি পরিমাণ বেঈমানী করেছে একজন বাঙালি হয়ে আরেকজন বাঙালির সাথে। সে ভিসা দাতাকে খুঁজতে থাকে। এবং পেয়ে যায়। ভিসা দাতাকে যখন বলে তার সাথে বেঈমানীর কথা তখন ভিসা দাতা উল্টো ফয়সলকে ধমক দেয়। ধরিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেবে বলে শাসায়। বেচারা নিরূপায়, তার সুখের স্বপ্নটার যেন মৃত্যু ঘটবে। চারপাশ কুয়াশায় অন্ধকার দেখে। পনের হাজার টাকা থেকে খোরপোষ পাঁচ হাজার লেগে যায় নিজেরই। দশ হাজার টাকা বাড়িতে বাবার কাছে পাঠায়।.

প্রথম প্রথম বাবা মা ছেলে রুজি করতে শিখেছে ভেবে টাকা এতো কম কেন জানতে চান না। দু-তিন মাস পর ফয়সলকে কৈফিত দিতে হয়। সে সত্য কথা বলে। মা বাবা ভিসা দাতাকে দু-চার গালি আর অভিশাপ দিয়েই থাকেন ক্লান্ত। বেশি বেশি রোজগার করতে ছেলের জন্য দোয়া করতে থাকেন খোদার দরবারে। কিছুদিন পর বাবা মা জানতে চান সে কেমন আছে? সে উত্তর দেয় তার জন্য চিন্তা না করতে। এভাবে চলতে থাকে, কিন্তু বাবা মা-র চিকিৎসার খরচ বোন দু-টির পরীক্ষা ফি, কাপড় চোপড় ইত্যাদি আর তার পাঠানো দশ হাজার টাকায় কুলোয় না।.

ঋণের বোঝা দেশে বিদেশে বাড়তে থাকে। ফয়সলের এ্যাকামার মেয়াদ বাড়াতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মোটা অংকের ঘুষ দাবী করে। যার পরিমাণ বাংলাদেশের তিন লক্ষ টাকা। ফয়সলের পক্ষে ঐ টাকা কোন অবস্থায় দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। ঐ টাকা দেবার জন্য প্রথম প্রথম দু-চারজন বাঙালির নিকট ধার কর্জ চায়, এবং ভাবতে থাকে মা বাবার স্বপ্ন আর নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের উন্নতির জন্য অনিয়মের নাম নিয়ম মেনে তার এ্যাকামার পুনঃমেয়াদ বাড়াবে। শেষ পর্যন্ত নতুন প্রবাসী হিসাবে ঋণদাতা কেউ সহযোগিতা করে না। ফয়সল চাকুরী হারানো সহ অবৈধ অভিবাসী হবার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় অথচ কিছুই করার থাকে না।.

নিরূপায় হয়ে ভিসাদাতাকে ঘৃণা আর ভাগ্যকে নিয়তি হিসাবে মেনে নিতে থাকে। প্রবাসের অনেকেই এ ধরনের পরিস্থিতির কথা বাবা মাকে জানাতে চায় না, আবার কেউ কেউ জানায় কিন্তু দেশ থেকে কিছুই করার থাকে না। অনেক সময় মালিক পক্ষ ইচ্ছা করে শ্রমিকের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত কিংবা ভিসা কেটে দেশে পাঠিয়ে দেয়। দালালের খপ্পরে পড়ে অনেক জনের জেল জুলুম, নির্যাতন সইতে হয়। দেশের দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন কিংবা সরকারী সহযোগিতার অভাবে লাখো লাখো বাংলাদেশীদের কপালে অসহায় নি:স্বতা এবং কালো মেঘে ছেঁয়ে যায়।.

দেখতে দেখতে ফয়সলেরও তাই হলো। যে টাকা খরচ করে রুটি রোজির জন্য প্রবাস জীবনে যাত্রা করেছিলো তা উসুল হতে না হতেই দেশে বিদেশে ঋণের বোঝা বাড়িয়ে আবুধাবিতে অবৈধ অভিবাসী হতে হয়েছে। অনেক বাঙালি অনেক দেশে অবৈধ ভাবে বসবাস করে, কিন্তু তাদেরকে দূতাবাস হতে কোন প্রকার সহযোগিতা করা হয় না এই অপবাদটা মুছার কোন পদক্ষেপ নিতে দেশ পরিচালকদের উদাসীনতাই দেখা যায়। ফয়সল একদন কোম্পানির কাজ ফেলে রাতের অন্ধকারে আবুধাবি ছেড়ে শারজায় চলে যায়।.

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজা একটি প্রসিদ্ধ এলাকা। ফয়সল সেখানে গোপনে গোপনে কাজকর্ম করতে থাকে। দেশে মা বাবা ভাই বোন কে যা দেয় তা দিয়ে কোন রকম বেঁচে থাকা আর স্বপ্ন দেখা ভাগ্যের চাকা ঘুরবেই। ফয়সল বেশি করে রুজি করে তাদের অভাব মেটাবেই। চিকিৎসার টাকা দেবে বোন দু-টির স্কুলে পড়ার ব্যবস্থা হবে, মাটির ঘরে ইটের দেয়াল উঠবে, আরো কত কি। কিন্তু ভাগ্য যাদের অভিশাপ তার দিন ফিরবে কি করে! ফয়সল প্রথম খেয়ে দেয়ে মাসে দশ হাজার টাকা পাঠাতো এখন দু-তিন মাসে পাঠায় দশ হাজার। দেশে দেনা বাড়তে থাকে।.

চাল-ডাল, পেঁয়াজ রসুনের দাম ও দিন দিন বাড়ছে। কিছু দিনের মধ্যে ঔষধ নামের কসাইখানায় মানুষ যেতে পারবে কিনা আগাম বলা মুশকিল। দিন গুণতে গুণতে কাটছে রাজ্জাক সাহেবের। ফয়সল ফোন করলেই জাকিরের কথা বলেন যদি জাকির-কে সে ওখানে নিতে পারতো তবে দু-ভাইয়ের রুজিতে স্বচ্ছলতা ফিরে আসতো সংসারে। ফয়সলও তাই চায়। কিন্তু সে কি করবে: সে এখন অবৈধ অভিবাসী। যখন তখন পুলিশ তাকে ধরলে দেশে ফিরে আসতে হবে এছাড়া কোন উপায় নেই। অবৈধ হয়েছে ছয় মাস হলো। শারজায় ইতিমধ্যে এক বাঙালি তাকে ভালো একটি কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। ফয়সল খুব সাবধানে কাজে যাতায়াত করে। এভাবে দু-মাস চললো।.

দু-মাসে দেশে খেয়ে দেয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকাও পাঠিয়েছে। তার মুখে হাসি আর মনে আত্মবিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি অগাধ নমনীয়তা জ্ঞাপন করে ভাবলো আল্লাহ এতো দিনে তার দিকে তাকিয়েছেন। এভাবে আরো এক মাস পূর্ণ হলো। মাস পূর্ণ হবার দিন বেতন নিয়ে ম্যাসে ফিরছে ফয়সল এমন সময় শারজা পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। আর রক্ষা হলো না, আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়লো ফয়সলের। জেল-টেল খেটে বাড়ি ফিরে আসতে হলো ফয়সলকে। শেষ মাসের বেতনের টাকাগুলো না খরচিয়ে বড় কষ্ট করে বাড়ি নিয়ে এসেছে। বাড়ি যখন পৌঁছে তখন রাত এগারোটা।.

ফয়সল চিন্তায় ভেঙ্গে পড়লো, তার বাবা তাকে সান্ত্বনা দিলেন। ফয়সলের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। অভাবের তাড়না আর পরিবারের ভরণ পোষণ সামলাতে ফয়সল ছুটে চললো হকার ব্যবসাতে। এদিকে বাড়ি এসে জানতে পায় তার বন্ধু জেহিন আমেরিকা চলে গেছে। ফয়সল ভাবলো এদেশের বড়লোক বড়লোকই হলো আর গরীব গরীবই থাকবে। দশ বছর পর জেহিন আমেরিকা থেকে দেশে ছুটিতে এলো। ফয়সলের খোঁজ নেয়া দূরে থাক, একদিন স্মরণই করেনি। ফয়সল প্রতিদিন বন্দর বাজারে তারকারী হকার করে চলছেই।.

একদিন পড়ন্ত বিকালে জেহিন ফয়সলকে দেখলো বন্দর বাজারে তরকারী হকার করছে। জেহিনের খুব পাশ ঘেঁষে ফয়সল চলে গেল। জেহিনও কোন কিছু না বোঝার আগেই ফয়সলকে না দেখার ভান করে চলে গেল। ফয়সল কপালে হাত দিয়ে ভাবলো হায়রে খোদা, তুমি অনেক চেনা মানুষকে কখনো এ জগতে অচেনা বানিয়ে দাও। তোমার মহিমা বোঝার উপায় কারো নেই। কষ্টকে জীবন সাথী করে, রোদ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে, আর পুলিশের তাড়ানি খেয়ে জীবনের নৌকা টেনে চলছে ফয়সল। সে এখন স্বপ্ন দেখে না, করেনা বড়লোক হবার কোন কল্পনা, সে ভাবে বেঁচে থাকার নামই জীবন। (সমাপ্ত). .

ডে-নাইট-নিউজ / মো. সায়েস্তা মিয়া

সাহিত্য-সংস্কৃতি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ