প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: খ্রিষ্টান স¤প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন উপলক্ষে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ছিল উৎসবের রঙিন আবহ। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন খ্রিষ্টান পল্লী ও গির্জায় বড়দিন উদযাপন করা হয়। বড়দিনকে কেন্দ্র করে গ্রাম থেকে গির্জা, সবখানেই দেখা যায় আনন্দ, প্রার্থনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মিলনমেলা।.
.
উপজেলার ৩ নম্বর কাজিহাল ইউনিয়নের পারইল কুদবীর ক্যাথলিক মিশন গির্জায় সকাল সাড়ে ৯টায় বড়দিনের প্রার্থনা ও ধর্মসভা পরিচালনা করেন গির্জার ইনচার্জ ফাদার মাইকেল ক্রুশ।
প্রার্থনা শেষে বক্তব্যে ফাদার মাইকেল ক্রুশ বলেন, মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্তি দিতে এবং অন্তরের অন্ধকার দূর করে আলোর পথ দেখাতে প্রভু যিশু খ্রিষ্ট পৃথিবীতে এসেছিলেন। শান্তি, ন্যায় ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠার আহŸানই বড়দিনের মূল শিক্ষা। এদিনের প্রার্থনায় দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ কামনা করা হয়।.
.
ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে কুদবীর মিশন চত্বরে স্থানীয় খ্রিষ্ট ধর্মালম্বী নারী ও পুরুষরা নিজস্ব সংস্কৃতির বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করেন।
একইভাবে উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের পুখুরী কামারপাড়া ক্যাথলিক চার্চে বড়দিনের প্রার্থনা পরিচালনা করেন পালক ফান্সিস মুর্মু। পাশাপাশি পুখুরী এসডিএ চার্চেও খ্রিষ্ট ধর্মালম্বী নারী ও পুরুষরা প্রার্থনায় অংশ নেন।.
জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ৬৩টি গির্জা ও চার্চে বড়দিন উপলক্ষে প্রার্থনা, আলোচনা সভা, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়।
বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টান পল্লীগুলোকে নানা রঙে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ঘরবাড়ীতে আঁকা হয়েছে রঙিন আলপনা, পরিবারের সবাই সাধ্যমতো নতুন পোশাক পরে উৎসবে অংশ নেন। গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আনন্দ, যা অন্তত এক সপ্তাহ ধরে চলবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা। আত্মীয়-স্বজনদের আগমনে বাড়িতে বাড়িতে চলছে আপ্যায়ন।
পারইল কুদবীর ক্যাথলিক মিশনপাড়া গ্রামের গৃহবধূ রোজিনা টুডু (২৯), শিক্ষার্থী রিমি টুডু, লাকি হেম্ব্রম, কেয়া হাঁসদা ও জয়া হাঁসদা এবং বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়ার (নৃ-গোষ্ঠীপাড়া) গৃহবধূ ফুলমনি হেম্ব্রম ও পুষ্প মার্ডী বলেন, বড়দিনকে ঘিরে সবার মধ্যে আলাদা আনন্দ বিরাজ করছে। সে আনন্দ থেকেই ঘরবাড়ী সাজানো হয়েছে আলোকসজ্জা ও আলপনায়। বেথেলহামের গোশালার আদলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গোশালা স্থাপন করা হয়েছে। বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বিভিন্ন স্থান থেকে আত্মীয়স্বজন বাড়িতে এসেছেন। অতিথিদের জন্য পিঠাপুলি, পায়েশসহ নানা ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করা হয়েছে।.
.
কুদবীর মিশন গির্জা পরিচালিত সেন্ট পোলস্ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিস্টার ইনচার্জ প্রধান শিক্ষক সিস্টার মারিয়া কিস্কু বলেন, ২৫ ডিসেম্বর প্রভু যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন হওয়ায় দিনটি শুভ বড়দিন হিসেবে পালন করা হয়। বড়দিনের প্রার্থনায় পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে জীবনযাপনের প্রত্যাশাই ফুটে ওঠে। এ উপলক্ষে প্রতিটি গির্জা ও চার্চে প্রার্থনা এবং ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হয়।
অন্যদিকে উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের রাঙামাটি ট্রিনিটি লুথারেন চার্চ ট্রাস্টের উদ্যোগেও দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপন করা হয়।.
রাঙামাটি ট্রিনিটি লুথারেন চার্চ ট্রাস্টের পরিচালক বাবুলাল হাঁসদা মাস্টার বলেন, বড়দিন উপলক্ষে সকালের প্রার্থনায় দেশ, জাতি ও বিশ্বের সকল মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করা হয়েছে।.
. .
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: