• ঢাকা
  • বুধবার, ১২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২৭ আগষ্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

সাংবাদিকতার সংকট প্রবীণ সংবাদকর্মীদের অনিশ্চিত জীবন ও অজানা অধ্যায়


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: বুধবার, ২৭ আগষ্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৫৮ এএম;
সাংবাদিকতার সংকট,  প্রবীণ সংবাদকর্মীদের,  অনিশ্চিত জীবন,   অজানা অধ্যায়
সাংবাদিকতার সংকট প্রবীণ সংবাদকর্মীদের অনিশ্চিত জীবন ও অজানা অধ্যায়

 

বাংলাদেশে সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশা নয়, এটি দীর্ঘদিন ধরে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার, সত্য প্রকাশের সংগ্রাম এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্নিশিখা। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় সেই সাংবাদিকতার ভেতরকার চিত্রটাই সবচেয়ে ভয়াবহ। প্রথিতযশা সাংবাদিক নিয়ন মতিউলের লেখায় উঠে এসেছে এক নির্মম সত্য— সাংবাদিকতার নেপথ্যে যাঁরা আজীবন কলম ধরে সমাজকে সচেতন করেছেন, তাঁরা নিজেরাই জীবনসংগ্রামে দিশাহারা।.

 .

 .

প্রবীণ সাংবাদিকদের দুর্দশা: বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রতিনিয়ত যে ছাঁটাই চলছে, তার প্রধান শিকার হচ্ছেন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ সংবাদকর্মীরা। বয়স ৪০ পেরোলেই অনেককে “অপ্রয়োজনীয়” মনে করে বাদ দেওয়া হচ্ছে। একসময় যে সহকর্মীরা ছিলো অফিসের মূল ভরসা, এখন তাদের বলা হচ্ছে—“আপনার স্পিড কমে গেছে।” অথচ এই বয়সে এসে তাদের হাতে কোনো সঞ্চয় থাকে না, থাকে না পেনশনের নিশ্চয়তা। অন্য পেশায় অবসরের সঙ্গে কিছু নিরাপত্তা 5র, সাংবাদিকতায় অবসরের মানে হলো শূন্য হাতে বাড়ি ফেরা।

স্বাস্থ্য ও আর্থিক অনিশ্চয়তা: সাংবাদিকতা পেশা চরম অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে চলে। বেতনের বৈষম্য, মাসের পর মাস বকেয়া, কিংবা হঠাৎ ছাঁটাই—সব মিলিয়ে জীবন অস্থির হয়ে ওঠে। প্রবীণ সাংবাদিকদের অনেকেই ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত। নিয়মিত চিকিৎসা চালানো তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে স্বাস্থ্য আর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা একসঙ্গে তাদেরকে কোণঠাসা করে দেয়।

 .

 .

নতুন প্রজন্ম বনাম অভিজ্ঞ প্রজন্ম: সংবাদমাধ্যমের নিয়োগে এখন স্পষ্ট বিভাজন দেখা যাচ্ছে। কম বেতনে তরুণদের নেওয়া হচ্ছে, আর অভিজ্ঞদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। তরুণরা ‘স্পিড’ ও ‘স্পিরিট’-এর নামে অফিসে বেশি সময় দিতে বাধ্য হন, অথচ তাদের বেতন তুলনামূলক কম। অন্যদিকে অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা, যাদের পেশাগত জ্ঞান ও নেটওয়ার্ক অমূল্য, তারা অবহেলিত হচ্ছেন। এভাবে সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞতার প্রতি অশ্রদ্ধা গোটা পেশাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

সামাজিক মর্যাদার অবক্ষয়; যে সাংবাদিকরা জনগণের অধিকার রক্ষায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন, তারাই আজ জনমনে সন্দেহের চোখে দেখা শুরু হয়েছে। “বেতন পায় না, সঞ্চয় করে না, সংসার সামলাতে পারে না”—এই বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করুণার দৃষ্টি আর উপেক্ষা। সাংবাদিকতার অবশিষ্ট আত্মসম্মানও ধুলোয় লুটিয়ে যাচ্ছে। অথচ গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড বলা হয় গণমাধ্যমকে। কিন্তু সেই মেরুদণ্ডের সৈনিকরা আজ নিজস্ব মর্যাদাহীনতায় ভুগছেন।

রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্বহীনতা: সরকারি চাকরিতে পেনশন ব্যবস্থা আছে, বেসরকারি অনেক খাতেও কর্মীদের জন্য অবসরকালীন সুবিধা থাকে। কিন্তু সাংবাদিকতায় নেই কোনো নিশ্চিত সুরক্ষা। শ্রম আইন থাকা সত্ত্বেও সংবাদকর্মীদের বেতন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, অবসরের সুযোগ নিশ্চিত হয়নি। প্রবীণ নিবাস কিংবা সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলও তেমন কার্যকর হয়নি। ফলে সাংবাদিকরা একেবারে প্রান্তিক অবস্থায় পড়ে যাচ্ছেন।

 .

সমাধানের পথ: এই সংকট নিরসনে কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরি—


১. আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা: সংবাদকর্মীদের জন্য একটি আলাদা অবসরকালীন সুবিধা ও পেনশন স্কিম চালু করতে হবে।
২. বেতন কাঠামোতে সমতা: একই কাজের জন্য ভিন্ন বেতন—এ বৈষম্য দূর করতে হবে।
৩. বকেয়া বেতন বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ: প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করতে হবে সময়মতো বেতন দিতে।
৪. প্রবীণ সাংবাদিক কল্যাণ তহবিল: রাষ্ট্রীয় বা বেসরকারি উদ্যোগে একটি তহবিল গড়ে তুলে প্রবীণ সাংবাদিকদের চিকিৎসা ও জীবিকা সহায়তা দিতে হবে।
৫. সামাজিক সম্মান পুনর্গঠন: সাংবাদিকদের অবদান সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে তাদের প্রতি করুণা নয়, শ্রদ্ধা জন্মায়।

 .

উপসংহার: নিয়ন মতিউলের লেখায় প্রতিফলিত প্রবীণ সাংবাদিকদের জীবনের অজানা অধ্যায় আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—“অন্যের জন্য লিখতে লিখতে নিজের জীবনের গল্পটাই যেন হারিয়ে যায়।” যারা সমাজের আয়না তুলে ধরেছেন, তারাই আজ সমাজের কাছে অবহেলিত। সাংবাদিকতার এই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ কেবল সাংবাদিকদের নয়, পুরো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যই হুমকি।

 .

এখন সময় এসেছে রাষ্ট্র, সংবাদমাধ্যম মালিকপক্ষ এবং সমাজকে একসঙ্গে ভাবার— সাংবাদিকদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানে আসলে সত্য ও গণতন্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।.

 .

লেখক: শফিউল বারী রাসেল (কবি, গীতিকার, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষক) .

 . .

ডে-নাইট-নিউজ /

সম্পাদকীয় বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ