এস এম জজ মিয়া ( বিশেষ ক্রাইম রিপোর্টার): ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর থানাধীন ৭ নং তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের অষ্টগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলী। তাঁর সাত ছেলের মধ্যে তিনজন প্রবাসী। এদের মধ্যে ৩য় ছেলে আব্দুল আজিজ (৫০) তাঁর জীবনের দীর্ঘ ৩৪ বছর সৌদি আরবে শ্রম দিয়ে টাকা উপার্জন করে দেশে বাবা ও বড় ভাই আব্দুল আহাদ আলীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। আজিজের স্বপ্ন ছিল—নিজেদের জীবন যাক, তবুও ভাইদের সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানোর ব্যবস্থা করা। আজ সেই কষ্টার্জিত টাকাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর এবং তাঁর ছোট ভাই মো. রাকিবের জীবনে।.
জানা গেছে, আব্দুল আজিজ দেশে ফিরে বড় ভাই আব্দুল আহাদের কাছে হিসেব চাইলে পারিবারিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। আহাদ আজিজের উপার্জিত টাকার কোনো হিসেব দিতে রাজি হননি। তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে আজিজকে জীবননাশের হুমকি দেন এবং একাধিকবার মারধরও করেন।.
আব্দুল আহাদের এই বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিবাদ করেন ছোট ভাই রাকিব। এতে রাকিবও আহাদের শত্রুতে পরিণত হন। আহাদ দলবল নিয়ে রাকিবের ওপর একাধিকবার প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছেন। তাঁর লোকজন বাড়ির সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে বসে থাকে এবং রাকিব বের হলেই তাঁকে মারার হুমকি দেয়।.
আব্দুল আহাদ মিথ্যা অভিযোগে একের পর এক মামলা দায়ের করে যাচ্ছেন। মহামান্য আদালত ভিত্তিহীন প্রমাণিত হওয়ায় একাধিক মামলা খারিজও করেছেন। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অসংখ্যবার সালিশি বৈঠক করে প্রতিবারই আব্দুল আহাদকে অপরাধী সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু আহাদ তা অগ্রাহ্য করে থানায় গিয়ে প্রতিবারই মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করেন।
আরও রহস্যজনক বিষয় হলো—শালিশি বৈঠকগুলোতে থানা পুলিশ উপস্থিত থাকলেও আহাদের মিথ্যা অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে এফআইআর করে তদন্ত শুরু হয়, আর সেই তদন্ত চলে প্রহসনের মতো। এলাকাবাসীর আক্ষেপ, বিশিষ্ট সালিশদাররা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু পুলিশের তদন্ত শেষ হয় না। এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা একবাক্যে জানেন, সাত ভাইয়ের মধ্যে আব্দুল আহাদ একজন কুখ্যাত ও মারাত্মক অপরাধী জুয়াড়ি প্রকৃতির লোক।.
সহযোগী ভাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
অনুসন্ধানে জানা যায়, আব্দুল আহাদের সহযোগী তাঁরই আরেক ভাই আব্দুল খালেক। খালেকের বিরুদ্ধেও এলাকায় অভিযোগের শেষ নেই। এলাকার অপর এক ভুক্তভোগী এমরান অভিযোগ করেন, আব্দুল খালেক কখনো সিআইডি, কখনো ডিবি, আবার কখনো র্যাবের সদস্য পরিচয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি করেন।
অষ্টগ্রামের সামাজিক সালিশদারদের তথ্যমতে, আব্দুল আহাদ ও আব্দুল খালেক দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করে রেখেছেন। তাঁরা জোরজবরদস্তি করে রাকিব এবং আব্দুল আজিজের সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন। আশেপাশের লোকজনের আফসোস, আব্দুল আহাদ থানা পুলিশ ও বিজ্ঞ আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে মো. রাকিব, তাঁর স্ত্রী এবং আজিজকে হয়রানি করে যাচ্ছেন।
ঘাতক চক্রের সঙ্গে আহাদের গোপন আঁতাত: খুনের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা
অনুসন্ধানে মারাত্মক তথ্য বেরিয়ে আসে। এলাকার একাধিক লোক জানান, ইদানীং দুইজন অপরিচিত লোক মাঝেমধ্যে অষ্টগ্রামে এসে গোপনে আব্দুল আহাদের সঙ্গে দেখা করে। স্থানীয়রা তাঁদের ছবি তুলে গোপনে খোঁজ নিলে জানতে পারেন—তাঁরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার চিহ্নিত ডাকাত। তাঁরা টাকার বিনিময়ে সব ধরনের অপকর্ম করে থাকে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সরাইল থানাসহ বিভিন্ন থানায় ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধের মামলা রয়েছে।
এলাকার সকলের প্রশ্ন: এহেনো অপরাধীদের সঙ্গে আহাদের সম্পর্ক কী? আহাদ কি সম্পত্তি আত্মসাতের লোভে এখন ভাই হয়ে ভাই আব্দুল আজিজ ও রাকিবকে খুন করার পাঁয়তারা করছেন?.
হতভাগ্য পিতার আকুতি এবং পুলিশের তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতা:
বৃদ্ধ আব্দুল আলী সাত সন্তানের জন্ম দিয়ে আজ শেষ বয়সে এসে দেখেন—তাঁদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব, ভাই চাইছে ভাইয়ের জীবন নিতে। এলাকার সাহেব সর্দাররা বারবার বিচার সালিশ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেও বড় ছেলে আব্দুল আহাদ তা উপেক্ষা করে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে এফআইআর করে শুরু করে তথাকথিত তদন্ত। বছরের পর বছর যায়, কিন্তু তদন্ত শেষ হয় না। একটা মিথ্যা মামলা আদালত খারিজ করেন তো আহাদ আবার মিথ্যা অভিযোগ করেন, আর পুলিশ আবার এফআইআর করে তদন্তের নামে হয়রানি শুরু করে।.
তথ্যমতে, আব্দুল খালেক ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট স্ট্রোকের রোগী। অপরাধী আহাদের পরিকল্পনা হলো—একাধিকবার আব্দুল খালেককে উস্কানি দিয়ে রাকিব ও আজিজের বাড়িতে পাঠানো, যাতে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে ঠেলাধাক্কা দিলে আব্দুল খালেক পড়ে গিয়ে মারা যান। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্রিমিনাল আব্দুল আহাদ আলী তখন আব্দুল খালেককে হত্যার অপরাধে আব্দুল আজিজ ও মো. রাকিবকে আসামি করে জেলে ঢুকিয়ে তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি দখল করে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এই সমস্ত ভয়ঙ্কর তথ্য এলাকার সাধারণ মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য বিচারের জন্য সমাজের বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে অসহায় পিতা আব্দুল আলী তাঁর ছেলে আব্দুল আহাদকে দুই হাত জোড় করে অনুরোধ করেন, "তোমার করা মামলাগুলো কোর্ট থেকে তুলে নে বাবা।" জবাবে আহাদ বলেন, "আগে রাকিব যে মামলা করেছে, সে মামলা রাকিব উঠাক, তারপর আমি আমার মামলা উঠিয়ে নেব।" পিতার আদেশে রাকিব মামলা তুলে নিলেও ভূমিদস্যু আহাদ তাঁর মামলাগুলো কোর্ট থেকে তুলে নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
দুঃখের বিষয়, আহাদের বিষয়ে এখন সাহেব সর্দাররাও কথা বলতে নারাজ। অভিযোগ রয়েছে, আহাদ অনেক সর্দারের নামেও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন।
অভিজ্ঞ মহলের মন্তব্য, আহাদ চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা উচিত।.
অভাগা পিতা আব্দুল আলী এবং ক্ষতিগ্রস্ত সন্তান আব্দুল আজিজ ও রাকিবের জেলা প্রশাসনসহ দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন: বৃদ্ধ আব্দুল আলী কি তাঁর জীবদ্দশায় পুলিশের এই তদন্তের শেষ দেখে যেতে পারবেন না? তাঁর ছেলেদের ওপর চলা এই মিথ্যা মামলার হয়রানি কি শেষ হবে না? এই হতাশা নিয়েই কি তাঁকে মরে যেতে হবে?
তথ্য অনুসন্ধানে কাজ চলছে।.
.
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: