• ঢাকা
  • শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ০১ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

সংসার ও সমাজের আলোকবর্তিকা দরিদ্র কলেজ ছাত্রী রুমিলা মূর্মু


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৫:২৬ পিএম;
সংসার ও সমাজের আলোকবর্তিকা দরিদ্র কলেজ ছাত্রী রুমিলা মূর্মু
সংসার ও সমাজের আলোকবর্তিকা দরিদ্র কলেজ ছাত্রী রুমিলা মূর্মু

 .

জয়পুরহাট প্রতিনিধি : জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের নওদার পশ্চিমপাড়া আদিবাসী পল্লীর ছোট্ট একটি মেয়ের কাঁধে যেন গোটা সমাজের গুরু দায়িত্ব এসে পড়েছে। সেই মেয়েটি হচ্ছে পাঁচবিবি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুমিলা মূর্মু। বয়সে তরুণী হলেও তার জীবনসংগ্রাম অনেকটা বয়স্ক মানুষের মতোই কঠিন, দায়িত্বপূর্ণ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।.

 .

রুমিলা মূর্মু চার ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোন। বাবা বিমল মূর্মু বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন, শ্রমিকের কাজ আর আগের মতো করতে পারেন না। তাই আয়-রোজগারও তেমন হয়না। নেই নিজেদের জমিজমাও। ভাইয়েরাও খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের সংসার টিকিয়ে রাখা নিয়েই প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হয়। তাই বাবা-মায়ের থেকে আলাদা থাকেন তারা। ফলে সংসারের বড় দায়িত্ব এসে পড়েছে কন্যা রুমিলার কাঁধে।.

 .

নিজের পড়াশোনার খরচ থেকে শুরু করে সংসারের ব্যয়, সবই চালাতে হয় তাকে। গ্রামের ছোট ছোট শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে তিনি কিছু টাকা উপার্জন করেন। আর ধান কাটার মৌসুমে প্রাইভেট বন্ধ রেখে নেমে যান শ্রমিকের কাজেও। কষ্টের প্রতিটি আয়, ব্যয় হয় পরিবারের ও সমাজের প্রয়োজনে। ব্যক্তিগত আনন্দ বা বিলাসিতা তার জীবনে নেই বললেই চলে।.

 .

অভাব-অনটনের মাঝেও পূর্বপুরুষের ধর্মীয় ঐতিহ্য ধরে রাখতে রুমিলা একাই এগিয়ে এসেছেন দুর্গাপূজার আয়োজনে। জরাজীর্ণ মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে তার তত্ত্বাবধানে। অন্য মন্দিরগুলোতে প্রতিমার সাজসজ্জা অনেকটাই শেষ হলেও টাকার অভাবে এখানে কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি।.

 .

রুমিলা হিসেব কষে বলেন—প্রতিমা তৈরির মালাকার খরচ ১৫ হাজার টাকা, পুজোর উপকরণ প্রায় ১০ হাজার, ডেকোরেটরের আলোকসজ্জা ১২ হাজার আরও আনুষঙ্গিক খরচ মিলে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা লাগে। সরকারি বরাদ্দ থেকে ২০ হাজার টাকা পেয়েছি, বাকিটা আমি শ্রমিকের কাজ আর প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা থেকে ব্যায় করছি।.

 .

নিজের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে সমাজের দায়িত্ব পালন করা  তরুণী রুমিলা দৃঢ় কণ্ঠে আরও বলেন—সংসারের আয়ের উপার্জনকারী বলতে গেলে এখন একমাত্র আমিই। তারপরও আমাকে সবাই এত বড় দায়িত্ব দিয়েছে, তাই এবছর নতুন জামা-কাপড় কিনছি না। সেই টাকা পুজোর আয়োজনেই খরচ করছি।.

 .

মন্দির কমিটির সভাপতি খগেন মার্ডি বলেন—আমরা সবাই দিন আনি দিন খাই মানুষ। এবারের পুজোর মূল খরচের বড় অংশটাই রুমিলা দিয়েছে। তার যোগ্যতায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা ওকে মন্দির কমিটির সম্পাদক করেছি।.

 .

গ্রামের দরিদ্র মানুষের কাছে দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি তাদের সামাজিক একতারও প্রতীক। আর সেই একতাকে ধরে রাখতে নিজের স্বপ্ন, ইচ্ছা, আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে রুমিলা মূর্মু আজ হয়ে উঠেছেন সমাজের আশার আলো।.

 .

সংগ্রাম আর দায়িত্বের মেলবন্ধনে দাঁড়িয়ে থাকা রুমিলা মূর্মু শুধু একজন কলেজ ছাত্রীই নন, বরং তিনি আজ সমাজের আলোকবর্তিকা। প্রমাণ করেছেন তিনি সমাজকে এগিয়ে নিতে একজনের আন্তরিক চেষ্টাই যথেষ্ট।. .

ডে-নাইট-নিউজ /

সারাদেশ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ