
.
প্রতিটি প্রজন্মেই কিছু মানুষ থাকেন যারা সমাজের ভেতরকার অন্ধকার ভেদ করে নতুন আলো ছড়িয়ে দেন। কেউ রাজনীতিতে, কেউ শিল্প-সংস্কৃতিতে, আবার কেউবা কলমকে অস্ত্র করে সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ে শামিল হন। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এমন একজন দীপ্ত প্রতিভার নাম মোঃ হাসনাইন রিজেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে বর্ষসেরা লেখক সম্মাননা অর্জন করেছেন। চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম হলে বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তরুণ লেখক সম্মেলন ও ম্যাগাজিন মোড়ক উন্মোচন এই ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে লেখক, গবেষক, সাংবাদিকসহ প্রায় ২৫টির অধিক জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত তরুণ লেখকরা অংশগ্রহণ করেন। .
.
.
বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা প্রতিবছর অসাধারণ অবদান রাখা লেখকদের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। এবছরের বর্ষসেরা তরুণ কলাম লেখক সম্মাননা পেয়েছেন মোঃ হাসনাইন রিজেন। এটি তাঁর দীর্ঘদিনের অধ্যবসায় ও নিষ্ঠার ফসল। এই পুরস্কার প্রমাণ করে, তরুণ লেখকরাও আজকের বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তারা কেবল কলমের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন না, বরং জনমত গঠনেও সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। মোঃ হাসনাইন রিজেনের এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতের তরুণ লেখকদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে। এই অর্জন কেবল একটি পুরস্কার নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে তাঁর চিন্তা, সাহসী অবস্থান ও মানবিক দায়বদ্ধতার স্বীকৃতি।.
.
ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের সন্তান মোঃ হাসনাইন রিজেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন কৌতূহলী ও চিন্তাশীল। চারপাশের বৈষম্য, দুর্নীতি, অন্যায় আর অনিয়ম তাঁকে অস্বস্তি দিত। ২০২৩ সালে নিজ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুর্নীতি নিয়ে প্রথম কলাম প্রকাশের মাধ্যমে কলাম লেখার যাত্রা শুরু করেন। স্কুলজীবনেই খাতা-কলমে মনের ভাব প্রকাশ শুরু করেছিলেন। সেই ছোট্ট উদ্যোগই তাঁকে একসময় কলাম লেখক হিসেবে পরিচিত করে তোলে। বর্তমানে তিনি হাটহাজারী সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত। পাঠ্যজীবনের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নিয়মিত সময় বের করে লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ তাঁর কাছে লেখালেখি কেবল শখ নয়, বরং একটি দায়িত্ব। .
.
মোঃ হাসনাইন রিজেনের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সামাজিক বাস্তবতার গভীর বিশ্লেষণ। তিনি এমন সব বিষয়কে তুলে ধরেন যা সাধারণ মানুষ প্রতিদিন অনুভব করলেও প্রকাশ করতে পারেন না। তাঁর লেখায় উঠে আসে— দুর্নীতি ও বৈষম্যের নির্মম চিত্র, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, তরুণ সমাজের সম্ভাবনা ও সংকট, রাষ্ট্রীয় নীতি, অর্থনীতি ও গণতন্ত্রের প্রশ্ন, ন্যায়বিচার ও মানবিকতার গুরুত্ব। তাঁর ভাষা সহজ, তবে চিন্তা গভীর। পাঠক তাঁর লেখনীতে যেমন সাহসী অবস্থান দেখতে পান, তেমনি খুঁজে পান নতুন ভাবনার খোরাক।.
.
শুধু কলমে সীমাবদ্ধ নন মোঃ হাসনাইন রিজেন। তিনি নেতৃত্ব ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে জড়িত। বর্তমানে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন—NUSDF Bangladesh – ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডর, Next Generation Bangladesh - এর অর্থ-সম্পাদক ও যুব তারুণ্য ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা হিসেবে। এই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁর লেখাকে আরও বাস্তবভিত্তিক ও প্রভাবশালী করে তুলেছে বলে তিনি মনে করেন।.
.
মোঃ হাসনাইন রিজেন বিশ্বাস করেন, একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে তরবারির চেয়ে শক্তিশালী হলো কলম। তাঁর লক্ষ্য— নিজের লেখনীকে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কাজে লাগানো। ভবিষ্যতে তিনি চান আরও বড় পরিসরে কাজ করতে, যেখানে লেখার পাশাপাশি সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সরাসরি পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। তিনি মনে করেন, তরুণ সমাজ যদি কলম, চিন্তা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগায়, তবে বাংলাদেশ খুব দ্রুত একটি ন্যায়ভিত্তিক ও উন্নত রাষ্ট্রে রূপ নিতে পারবে।.
.
মোঃ হাসনাইন রিজেন আজ কেবল একজন তরুণ লেখক নন; তিনি এক অনুপ্রেরণার নাম। তাঁর লেখনী, সাহসী অবস্থান ও নেতৃত্বগুণ প্রমাণ করছে— বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়তে তরুণদের কলমই সবচেয়ে বড় শক্তি। বর্ষসেরা তরুণ কলাম লেখক সম্মাননা অর্জন নিঃসন্দেহে তাঁর জীবনের বড় অর্জন। তবে এর চেয়েও বড় বিষয় হলো— তিনি ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছেন, একজন মানুষ ইচ্ছাশক্তি ও লেখনীর মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারেন। মোঃ হাসনাইন রিজেনের গল্প আসলে তরুণ প্রজন্মের গল্প; যে প্রজন্ম অন্ধকার ভেদ করে আলো ছড়াতে চায়।.
. .
ডে-নাইট-নিউজ / নাম: সুরাইয়া আক্তার
আপনার মতামত লিখুন: