• ঢাকা
  • রবিবার, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

মাজার ভাঙচুর ধর্মের অপব্যাখ্যা নাকি অরাজকতার এজেন্ডা


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৪৫ পিএম;
মাজার ভাঙচুর ধর্মের অপব্যাখ্যা নাকি অরাজকতার এজেন্ডা
মাজার ভাঙচুর ধর্মের অপব্যাখ্যা নাকি অরাজকতার এজেন্ডা

ভূমিকা.

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৌহীদি জনতা বা উগ্রপন্থি একদল ধর্মীয় গোষ্ঠি সুফি মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। তাদের দাবি—মাজারে ভক্তদের কার্যক্রম “বিদআত” ও “শিরক”। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইসলাম কি এ ধরনের সহিংসতা সমর্থন করে? আর এই গোষ্ঠির প্রকৃত উদ্দেশ্য কি সত্যিই ধর্মীয়, নাকি রাজনৈতিক?.

কোরআনের দৃষ্টিতে সহিষ্ণুতা.

কোরআন স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে:“ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৬).

আল্লাহ আরও বলেছেন: “তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আর আমার জন্য আমার ধর্ম।” (সূরা কাফিরুন, আয়াত ৬).

অতএব, ভিন্ন প্রথা বা আচার থাকলেও কাউকে জোর করে সরানো কোরআনের শিক্ষার পরিপন্থী।.

হাদিসের ব্যাখ্যা.

নবী করীম (সা.) বলেছেন: “মুসলিম সে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে।” (সহিহ বুখারি).

এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে—অন্য মুসলিমের জান-মাল, ইবাদতের জায়গা ও সম্মান রক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। সুতরাং মাজারে হামলা কোনোভাবেই ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ নয়।.

নবীর আচরণ থেকে শিক্ষা.

মদিনা সনদের মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমসহ সব ধর্মাবলম্বীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি কখনো মন্দির, গির্জা বা ভিন্ন ধর্মের উপাসনালয় ধ্বংস করেননি। বরং তাদের রক্ষা করেছেন।.

 .

সুফি মাজারের ঐতিহাসিক ভূমিকা.

ধর্মীয় অবদান: আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান।.

সামাজিক অবদান: গ্রামীণ অর্থনীতি ও শিক্ষা বিস্তারে অবদান।.

সংস্কৃতি: সঙ্গীত, কবিতা ও লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে মানবিক সমাজ গঠন।.

সুফি সাধক শাহজালাল (রহ.), শাহ পরান (রহ.), খান জাহান আলী (রহ.) বা লালন ফকিরের মতো ব্যক্তিত্বরা মানবিক ইসলাম প্রচার করেছেন। এই ঐতিহ্য ধ্বংস করা মানে আমাদের শিকড় ধ্বংস করা।.

তৌহীদি জনতা কারা?:.

গবেষকরা মনে করেন, এরা মূলত ওয়াহাবি বা সালাফি ধারার প্রভাবে গড়ে ওঠা গোষ্ঠি। তাদের এজেন্ডা হলো—.

১. মাজারকে “শিরক” আখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা।.

২. সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।.

৩. রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ভেঙে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা।.

৪. তরুণ প্রজন্মকে উগ্রপন্থার দিকে টেনে নেওয়া।.

বাস্তবে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেয়ে তাদের লক্ষ্য বিশৃঙ্খলা ও ক্ষমতা অর্জন।.

সরকারের করণীয়.

আইনের প্রয়োগ:
১. মাজার ভাঙচুরকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি।.

২. এ অপরাধকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করা।.

শিক্ষা সংস্কার:
১. মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষায় সহিষ্ণুতা শিক্ষা।.

২. কোরআন-হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা।.

আলেম সমাজের ভূমিকা:
১. মূলধারার আলেমদের দিয়ে সঠিক ইসলামী ব্যাখ্যা জনগণের সামনে তুলে ধরা।.

২. বিভ্রান্তি নিরসনে আলোচনা ও সংলাপ আয়োজন।.

গণমাধ্যম প্রচারণা:
১. টিভি, পত্রিকা ও অনলাইনে জনসচেতনতা।.

২. বোঝানো যে মাজার ভাঙচুর ইসলাম নয়, ইসলামবিরোধী কাজ।.

মতভেদ দূর করার উপায়.

সংলাপ: মাজারপন্থী ও বিরোধী আলেমদের আলোচনায় বসানো।.

গবেষণা: প্রমাণভিত্তিক কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা ছড়িয়ে দেওয়া।.

সহিষ্ণুতা চর্চা: পরিবার, সমাজ ও ধর্মীয় মঞ্চে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলা।.

সমাধানের পথ.

১. সরকার, আলেম ও জনগণের ত্রিমুখী উদ্যোগ।.

২. তরুণ প্রজন্মের জন্য সঠিক ইসলামী শিক্ষা নিশ্চিত করা।.

৩. আইনের পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার প্রচার।.

৪. সুফি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।.

উপসংহার.

ইসলাম শান্তির ধর্ম। মাজার ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগ কোনোভাবেই ইসলামী শিক্ষা নয়। বরং এটি ধর্মের অপব্যাখ্যা, যা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।.

অতএব, সরকারের উচিত আইনের শাসন নিশ্চিত করা, আলেম সমাজের উচিত সঠিক ইসলামী ব্যাখ্যা জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং জনগণের উচিত সহিষ্ণুতার অনুশীলন করা।.

মাজার ধ্বংস নয়, বরং শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার মূল বার্তা।.

লেখক: শফিউল বারী রাসেল (কবি, গীতিকার, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষক).

তথ্যসূত্র.

১. কোরআন শরিফ: সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৬; সূরা কাফিরুন, আয়াত ৬।.

২. সহিহ বুখারি: মুসলিমের সংজ্ঞা সম্পর্কিত হাদিস।.

৩. মদিনা সনদ: ইসলামী ইতিহাসে বহুধর্মীয় সহাবস্থানের দলিল।.

৪. “South Asian Sufism and its Role in Social Harmony” — Journal of Islamic Studies, ২০১৮।. .

ডে-নাইট-নিউজ /

সম্পাদকীয় বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ