• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

লক্ষ্মীপুরে বনভূমি মাত্র ১৪ কিলোমিটার গাছ রোপণের চেয়ে কাটাই যেন প্রধান কাজ


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:৪২ পিএম;
লক্ষ্মীপুরে বনভূমি মাত্র ১৪ কিলোমিটার গাছ রোপণের চেয়ে কাটাই যেন প্রধান কাজ
লক্ষ্মীপুরে বনভূমি মাত্র ১৪ কিলোমিটার গাছ রোপণের চেয়ে কাটাই যেন প্রধান কাজ

আব্দুল মালেক নিরব, লক্ষ্মীপুরঃ : লক্ষ্মীপুর জেলায় বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৪ কিলোমিটার। বন বিভাগের উদ্যোগে প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ হাজার গাছ রোপণের কথা বলা হলেও বাস্তবে এসব গাছের সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অন্যদিকে, বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের নামে টেন্ডারের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে গাছ কেটে ফেলা হলেও, সেই স্থানে পুনরায় গাছ লাগানো হচ্ছে না।.

 .

স্থানীয়দের অভিযোগ, যেসব স্থানে গাছ রোপণ করা হয় সেগুলোর দেখভাল না থাকায় সাধারণ মানুষ ও গবাদি পশুর কারণে গাছ নষ্ট হচ্ছে। তদারকির অভাবে এসব গাছ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।.

 .

বন বিভাগের অধিকাংশ কর্মকর্তা নিয়মিত মাঠপর্যায়ে উপস্থিত থাকেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে লক্ষ্মীপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী বন সংরক্ষকও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন, ফলে কার্যকর তদারকি ব্যাহত হচ্ছে।.

 .

সড়ক সংস্কারের নামে গাছ কেটে বাড়ছে দুর্ঘটনা.

লক্ষ্মীপুর–রায়পুর–চৌমুহনী সড়কের দুই পাশে অতীতে সংস্কারের নামে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সড়কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও ধ্বংস হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, গাছ কেটে ফেলার পর থেকেই এই সড়কে দুর্ঘটনার হার বেড়েছে।.

 .

দুর্ঘটনার সময় গাড়িগুলো এখন সরাসরি রাস্তার পাশের রহমতখালী খালে পড়ে যাচ্ছে। এতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের সাতজন এবং আরেক ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের ধারণা, রাস্তার পাশে গাছ থাকলে দুর্ঘটনার সময় গাড়ি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হতো।.

 .

গাছ কেটে ফেলার ফলে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝড়-তুফান প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ছে, যা উপকূলীয় এই জেলার জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।.

 .

অতিরিক্ত গাছ কাটা ও অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয়দের, টেন্ডারকৃত গাছ কাটার পাশাপাশি অতিরিক্ত গাছও কাটা হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি দূর পর্যন্ত গাছ কেটে ফেলা হয় এবং বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা হয়।.

 .

মেঘনা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত লক্ষ্মীপুর জেলা সয়াবিন, নারিকেল ও সুপারির জন্য পরিচিত। জেলার আয়তন ১,৪৫৬ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ ৩৭ হাজার। এত বড় জেলা ও বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় বনভূমির পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য।.

 .

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের মোট ভূমির অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশে বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৫.৫৮ শতাংশ।.

 .

লক্ষ্মীপুর জেলা বন বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় প্রায় ১৪শ কিলোমিটার বনভূমি রয়েছে। রায়পুর উপজেলার আলতাফ মাস্টার ঘাট সংলগ্ন এলাকা, সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন এবং চররমনী মোহন ইউনিয়নে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে কিছু বনভূমি রয়েছে।.

২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১০ হাজার গাছ রোপণ এবং ১৫ হাজার চারা বিনামূল্যে বিতরণের কথা জানানো হয়। তবে আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ৫,৯০২টি গাছ কাটার জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।.

 .

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষির বিস্তার, অবৈধ লগিং, নগরায়ন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ—এসবই বনভূমি ধ্বংসের প্রধান কারণ। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি, মাটির ক্ষয়, বন্যা ও মরুকরণ। একই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা।.

 .

লক্ষ্মীপুর জেলা সুজনের সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, “লক্ষ্মীপুর একটি উপকূলীয় জেলা। এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হয়, তাই বনায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সরকার বন বিভাগে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে। কিন্তু যদি দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ হবে না। আমরা চাই বন বিভাগ সুশাসন নিশ্চিত করুক এবং বনায়ন কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করুক।”.

 .

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে লক্ষ্মীপুর জেলা সহকারী বন সংরক্ষক মোস্তফা আল হোসাইনের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।. .

ডে-নাইট-নিউজ /

অপরাধ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ