• ঢাকা
  • শনিবার, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২৪ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

ফুলবাড়ীতে অপরিকল্পিত ক্যানেলের ফাঁদে কৃষকরা


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:৫৯ পিএম;
ফুলবাড়ীতে,  অপরিকল্পিত,  ক্যানেলের,  ফাঁদে কৃষকরা
ফুলবাড়ীতে অপরিকল্পিত ক্যানেলের ফাঁদে কৃষকরা

প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বৃষ্টির পানি নয়, যেন কৃষকের চোখের পানি জমে ভাসিয়েছে জমি। টানা কয়েক দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে উপজেলার দুই ইউনিয়নের দশটি গ্রামের দেড় হাজার বিঘা বোরো ধানখেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। স্বপ্নের ধান ঘরে তোলার আগেই কোমর পানি ডুবেই তা কাটতে হচ্ছে কৃষকদের। কেউ কেউ ক্ষেতে নেমেই বলছেন, ‘এটা ধান কাটছি না, বুক ভাঙার ব্যথা কাটছি!’.


জলাবদ্ধতার কারণে ৩০০ বিঘার বেশি জমির ধান এখন পানির নিচে। ধান পচে যাওয়ার শঙ্কায় প্রখর রোদ কিংবা বৃষ্টি উপেক্ষা করে চড়া দামে শ্রমিক ভাড়া করে মাঠে নামছেন কৃষকরা। বিঘা প্রতি গুনতে হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। অথচ ধানের বাজার এখনো অনিশ্চিত।.


সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ৫ নম্বর খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, মহেশপুর, লালপুর, মহদিপুর, পূর্ব নারায়ণপুর এবং ৬ নম্বর দৌলতপুর ইউনিয়নের গড়পিংলাই, বারাইপাড়া, আড়াপাড়া, ঘোনাপাড়া, গণিপুর ও পলিপাড়া গ্রামের বিস্তীর্ণ জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।.


ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, জমির ধান রক্ষায় তারা চড়া দামে শ্রমিক নিয়ে কোমর পানি ঠেলে ধান কাটছেন, কিন্তু অনেক ক্ষেতেই ধান ইতোমধ্যে পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক মোস্তাফিজার রহমানের ৩২ বিঘা, মো. বাবুর ১৮ বিঘা, আইয়ুব আলীর ৪ বিঘা এবং জয়নাল আবেদিনের ৬ বিঘা জমি পানির নিচে। পাকা ধান বাঁচাতে কোমর পানি ঠেলে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন তারা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাদের এ দুর্দশার মূলে রয়েছে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ক্যানেল। ২০২০ সালে জাইকা প্রকল্পের অর্থায়নে এলজিইডি দৌলতপুর বারাইপাড়া এলাকায় ১৬৩ মিটার ক্যানেল (ড্রেন) নির্মাণ করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪৩ মিটার মিটার ক্যানেলটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এতে ২০৬ মিটার দীর্ঘ ক্যানেলটি নির্মাণে ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার ব্যয় হলেও, তা জমির চেয়ে দেড় থেকে দুই ফুট উঁচুতে হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের বদলে জমি আরও জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। বর্ষার সময় এই জমিগুলো পরিণত হয় এক একটি ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে।.


কৃষক মতিবুল রহমান, মহিদুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, বাচ্চু মিয়া ও বেলাল হোসেন জানান, ‘আমাদের জমিগুলো একসময় ছিল সোনার খনি। ফলন হতো ভালো, জীবন চলত নির্বিঘ্নে। কিন্তু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে জমির প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় দেড় হাজার বিঘা আবাদি জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সরকার ক্যানেল নির্মাণ করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্যানেলটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, তা জমির চেয়ে উঁচুতে থাকায় পানি নিষ্কাশনের পরিবর্তে বরং জমিতে আরও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। এতে সরকারের প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হলেও কোনো সুফল মেলেনি। ফলে গত ২০ বছর ধরে এসব জমিতে সঠিকভাবে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। জমিগুলো বছরের পর বছর পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এমনকি প্রয়োজন হলে জমিগুলো বিক্রি করতেও পারছি না। কারণ, কেউ এই জলমগ্ন জমি কিনতে আগ্রহী নয়। ঝুঁকি নিয়ে বোরো আবাদ করলেও ধান ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে কয়েকদিনের ঝড়োবৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে গেছে।’.


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ শাহানুর রহমান জানান, ‘কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হয়েছে, ক্যানেল দিয়ে পানি যথাযথভাবে নিষ্কাশন হচ্ছে না। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’.


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, ‘এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। নির্দেশনা এলেই বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।’.


কোনো ক্যানেল প্রকল্প কেবল অর্থায়নে সফল হলেই চলে না, মাঠপর্যায়ে এর কার্যকারিতা যাচাই না করলে তার পরিণতি হয় কৃষকের চোখের জল, সরকারের অপচয়, আর জমির দীর্ঘস্থায়ী অনুর্বরতা। কিন্তু কৃষকদের মনে প্রশ্ন রয়েই যায়, এই দীর্ঘ অপেক্ষার শেষ কোথায়? কৃষকের চোখের জল কি কোনো প্রকল্পের পৃষ্ঠায় লেখা হয়? . .

ডে-নাইট-নিউজ /

কৃষি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ