
প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ধান কাটার মৌসুমে কৃষিশ্রমিক সংকট ও মজুরি বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সংকটের কারণে অনেক জমির ধান কাটতে দেরি হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ার পাশাপাশি ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।.
.
চলতি মে মাসের শুরু থেকে উপজেলায় বোরো ধান কাটার ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। তবে শ্রমিক সংকট ও মজুরি বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। এখন এক বিঘা (৩৩ শতক) জমির ধান কাটতে খরচ পড়ছে দূরত্ব ও অবস্থানভেদে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। এতে ধান মাড়াই, ঝাড়াই ও শুকানোর খরচ ধরলে ব্যয় আরও বাড়ছে।.
.
উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ফুলবাড়ীতে ১৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বাস্তবে আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ১৮৬ হেক্টরে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৫ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। এই মৌসুমে জিরা শাইল, ব্রিধান-২৯, ব্রিধান-৮৯, ব্রিধান-৯২, ব্রিধান-১৬, বিনা-২৫ ও হাইব্রিডসহ নানা জাতের ধান আবাদ হয়েছে।
কৃষকেরা জানান, প্রতি বোরো মৌসুমে শ্রমিক সংকট লেগেই থাকে। অনেকে ভালো মজুরির আশায় বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, সান্তাহার, চলনবিলসহ বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটতে চলে যান। ফলে স্থানীয়ভাবে শ্রমিক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।.
.
শিবনগর ইউনিয়নের মধ্যসুলতানপুর গ্রামের কৃষক লিটন হোসেন বলেন, তাঁর ১২ বিঘা জমির ধান কাটতে বিঘাপ্রতি ৫ হাজার ৬০০ টাকা মজুরিতে ১৫ জন শ্রমিক নিয়েছেন। ধান মাড়াইয়ের জন্য প্রতিটি বিঘায় আরও ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সার-কীটনাশক, রোপণ, নিড়ানি, সেচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে। মিনিকেট ধানে বিঘাপ্রতি ৪০ থেকে ৪২ মন উৎপাদন হলেও তাপদাহে কিছুটা ফলন কমেছে বলে জানান তিনি। ব্রিধান-২৯ জাতের ধান কাটতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে।.
.
বাগড়া গ্রামের কৃষক জব্বার আলী বলেন, দেড় বিঘা জমির ধান কাটতে তিনি সাড়ে ৫ হাজার টাকা করে মজুরিতে ২০ জন শ্রমিক নিয়েছেন। ধানের ফলন ভালো হলেও পরিবহন ও প্রক্রিয়াজাত খরচ চিন্তায় ফেলছে।
একই গ্রামের কৃষক নূরে আলম সিদ্দিক জানান, তিনদিন ধরে শ্রমিক জোগাড়ে ব্যর্থ হয়েছেন। শ্রমিকরা এখনও আগের জমির ধান কাটাই শেষ করতে পারেনি।.
.
অন্যদিকে শ্রমিকরাও নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। বাগড়া গ্রামের শ্রমিক আতিউর রহমান, লিয়াকত আলী, রুহুল আমিন ও আব্দুল মোন্নাফ বলেন, ধান কাটার মজুরি বাড়লেও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এত বেশি যে দিন শেষে হাতে কিছুই থাকে না। ধান কাটার মৌসুম ছাড়া তাঁদের তেমন কোনো আয় থাকে না।.
.
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মো. শাহানুর রহমান জানান, শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় ৩০টি আধুনিক হারভেস্টার মেশিন ভর্তুকিতে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে মাঠে ধান কাটার কাজ চলছে। কৃষকদের আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।.
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: