
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কগুলিতে, বিশেষত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক করিডোরে, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে।.
এর মধ্যে আশুগঞ্জ-আখাউড়া অংশে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের (Efcons Infrastructure Limited) অধীনে চার লেনের কাজ অন্যতম। চুক্তি সম্পাদন এবং নিয়মিত উপদেষ্টা (consulting engineer/supervisor) সফর থাকা সত্ত্বেও জনসাধারণের দুর্ভোগ কমার পরিবর্তে কেন দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, তার প্রধান কারণগুলি নিচে তুলে ধরা হলো।.
১. কাজের অস্বাভাবিক ধীরগতি ও দীর্ঘসূত্রিতা.
এফকন চুক্তির আওতায় আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও এটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। বছরের পর বছর ধরে কাজ চলার কারণে সড়কের বিভিন্ন অংশে মাটি, পাথর ও সরঞ্জাম ফেলে রাখা হয়, যা যান চলাচলের পথকে সংকীর্ণ ও জটিল করে তোলে। নির্মাণকাজে এই দীর্ঘসূত্রিতা ট্র্যাফিক জ্যামের প্রধান কারণ।.
২. ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মবিরতি.
২০২৩ সালের আগস্ট মাসে সরকার পতনের পর সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এফকনস-এর ভারতীয় কর্মীরা নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। .
যদিও তারা পরে ফিরে এসেছেন, কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত কর্মবিরতি কাজের গতিকে মারাত্মকভাবে শ্লথ করে দিয়েছে।.
৩. জরুরি সংস্কার কাজের অভাব.
যখন একটি মহাসড়কে বড় আকারের নির্মাণকাজ চলে, তখন সাধারণত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) জরুরি ভিত্তিতে খানাখন্দ মেরামতের কাজ বন্ধ রাখে। .
এর ফলে, নির্মাণকাজের কারণে সৃষ্ট গর্ত, ভাঙাচোরা অংশ এবং বর্ষার কারণে জমা পানি যান চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে ওঠে। বর্তমানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে এই সমস্যা প্রকট।.
৪. অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা.
নকশা সংশোধন, জমি অধিগ্রহণ এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে প্রকল্পের কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে।.
এর প্রমাণ হিসেবে প্যাকেজ-৩ এর কাজ মাঝখানে ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা যায়, যা সামগ্রিক প্রকল্পের গতি কমিয়ে দেয়।.
৫. অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ.
বাংলাদেশের প্রধান শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলির সংযোগস্থল হওয়ায় মহাসড়কগুলিতে যানবাহনের চাপ (বিশেষ করে পণ্যবাহী ভারী ট্রাক) অত্যধিক থাকে। নির্মাণকাজের কারণে পথ সংকুচিত হলে এই অতিরিক্ত চাপ তীব্র যানজটে রূপ নেয়।.
এফকন চুক্তি' বা 'উপদেষ্টা সফর' কেবল প্রকল্পের আইনি ও তদারকি দিকগুলি নিশ্চিত করে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে ঠিকাদারের ধীরগতি, কর্মবিরতি এবং জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের মতো সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান না হলে মহাসড়কের এই মহাদুর্ভোগ এখনই শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সড়কটি পুরোপুরি চার লেনে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে।. .
ডে-নাইট-নিউজ / Roman Khan
আপনার মতামত লিখুন: