• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ০৯ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের ডিম-রাজনীতি


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫৩ পিএম;
নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের ডিম-রাজনীতিনিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের ডিম-রাজনীতি
নিউইয়র্কে আওয়ানিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের ডিম-রাজনীতিমী লীগের ডিম-রাজনীতি
নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের ডিম-রাজনীতি: রাজনৈতিক দৈন্যদশা নাকি আত্মপ্রতিরক্ষার অজুহাত?

ঘটনার সারসংক্ষেপ: জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনকে ঘিরে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এনসিপি নেতৃবৃন্দ ও জামায়াত প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ডিম নিক্ষেপ ও অশ্রাব্য স্লোগান দেয়। পরে স্থানীয় পুলিশ একজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। বিষয়টি শুধু নিউইয়র্কের রাস্তাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও বাংলাদেশী প্রবাসী মহলেও তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ.

১. রাজনৈতিক পরিপক্বতার সংকট: রাজনীতি যেখানে নীতি ও যুক্তির লড়াই হওয়ার কথা, সেখানে ব্যক্তিগত আক্রমণ, গালিগালাজ ও ডিম ছোড়ার মতো কাজ রাজনৈতিক শালীনতার ঘাটতি প্রকাশ করে।.

আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসময় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও জনআন্দোলনের প্রতীক ছিল। আজ যদি সেই দল বিদেশের মাটিতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ডিম ছুড়ে প্রতিহত করতে চায়, তাহলে তা তাদের রাজনৈতিক শক্তি নয় বরং দুর্বলতা প্রকাশ করে।.

২. প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো নাকি আত্মপ্রতিরক্ষা?: আওয়ামী লীগ সমর্থকদের যুক্তি হতে পারে, বিএনপি-জামায়াত একসময় দেশে সহিংস রাজনীতি করেছে, তাই প্রতিরোধ প্রয়োজন। কিন্তু বিদেশের মাটিতে, আন্তর্জাতিক মঞ্চের প্রান্তে গিয়ে এ ধরনের আচরণ আত্মপ্রতিরক্ষার বদলে আত্মঘাতী কৌশল বলেই মনে হয়।

৩. রাজনৈতিক দৈন্যদশা: বাংলাদেশে বর্তমানে ক্ষমতার ভারসাম্য একপেশে। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধীরা দুর্বল, তবে তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও প্রবাসী সমর্থন শক্তিশালী। আওয়ামী লীগ যদি সেই জায়গাতেও শারীরিক প্রতিহিংসার পথ বেছে নেয়, তবে তা তাদের রাজনৈতিক ভঙ্গুরতাকেই সামনে আনে।

 

জনমত জরিপ ও প্রতিক্রিয়া.

১. প্রবাসীদের মনোভাব: নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের বড় অংশই চান বাংলাদেশের রাজনীতি এখানে শান্তিপূর্ণ থাকুক। স্থানীয় বাংলা পত্রিকা ও প্রবাসী সংগঠনগুলোর জরিপে দেখা গেছে,.

  • প্রায় ৬৫% প্রবাসী মনে করেন, ডিম নিক্ষেপ ও গালাগালি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।.

  • মাত্র ২০% মনে করেন, এটি প্রতিপক্ষকে প্রতিরোধ করার “ন্যায্য” কৌশল।.

  • বাকিরা নিরপেক্ষ বা মন্তব্য করতে অনিচ্ছুক।.

২. দেশে প্রতিক্রিয়া: সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

  • একপক্ষ মনে করে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে বলেই বিদেশের মাটিতেও সহিংসতায় নামতে হয়েছে।.

  • অপরপক্ষ মনে করে, বিএনপি ও জামায়াতের আন্তর্জাতিক লবিং রুখতেই এমন প্রতিরোধ দরকার।.

কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট—ঘটনাটি দেশের ভেতরে রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর করেছে।.

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপট.

১. মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নজর: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (AI) সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করছে। এই ঘটনার পর তারা নতুন করে প্রশ্ন তুলতে পারে—আওয়ামী লীগ কি বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিদেশেও বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে?.

২. কূটনৈতিক অঙ্গনজাতিসংঘ অধিবেশনের সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা শিরোনামে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিনির্ধারকেরা এমন ঘটনায় বিরূপ ধারণা পোষণ করতে পারেন, বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক নজরদারিতে রয়েছে।

৩. অভ্যন্তরীণ কূটনৈতিক ক্ষতিবাংলাদেশ সবসময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল। বিদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়লে প্রবাসীদের মধ্যে হতাশা ছড়াবে, যা প্রবাসী রেমিট্যান্স ও জাতীয় স্বার্থে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

 
 

ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা.

১. আওয়ামী লীগের ইমেজ সংকট: ডিম নিক্ষেপ ও অশ্রাব্য স্লোগানের ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে দলটির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।.

বিরোধীদের সুযোগ: বিএনপি ও জামায়াত এখন দাবি তুলতে পারছে—আওয়ামী লীগ কেবল দেশে নয়, বিদেশেও বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম সহ্য করতে পারছে না।.

গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ: দেশে রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ, বিদেশেও যদি শালীনতা না থাকে, তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা দুইই সংকটে পড়বে।.

সুপারিশ.

১. রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দায়িত্বশীল হতে হবে: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে স্পষ্টভাবে বলতে হবে, বিদেশে বা দেশে সহিংস আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।.

২. কূটনৈতিক শালীনতা রক্ষা: জাতিসংঘ অধিবেশন বা এ ধরনের আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংযত থাকতে হবে।.

৩. প্রবাসীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নীতি: বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার যাতে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম সুশৃঙ্খল ও আইনসম্মত হয়।.

৪. গণতান্ত্রিক আলোচনার পথ তৈরি: সহিংস প্রতিরোধের বদলে রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে বিরোধিতা মোকাবিলা করাই হবে পরিপক্ব কৌশল।.

 .

 .

উপসংহার.

নিউইয়র্কের ঘটনাটি দেখিয়েছে—আওয়ামী লীগ এখনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে শালীন প্রতিযোগিতার পরিবর্তে উত্তেজনা, ভয়ভীতি ও হঠকারী আচরণের পথ বেছে নিচ্ছে। ডিম নিক্ষেপ ও গালাগালি কোনো রাজনৈতিক শক্তির প্রমাণ নয়, বরং দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।.

বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তর্জাতিক মঞ্চেও দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি। নাহলে শুধু দলের নয়, গোটা দেশের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ হবে।.

লেখক: শফিউল বারী রাসেল (কবি, গীতিকার, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষক) .

.

ডে-নাইট-নিউজ /

সম্পাদকীয় বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ