• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ০১ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

একজন উপদেষ্টার ভুলে যদি রাষ্ট্র হতো দায়ী


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০১:৩১ পিএম;
একজন উপদেষ্টার,  ভুলে যদি,  রাষ্ট্র হতো দায়ী
একজন উপদেষ্টার ভুলে যদি রাষ্ট্র হতো দায়ী

নিরাপত্তা বনাম প্রটোকল: একজন উপদেষ্টার ভুলে যদি রাষ্ট্র হতো দায়ী.

ট্যাগলাইন: যেখানে নিরাপত্তা বেঁচে যায় পরিচয়ের কাছে, সেখানে লজ্জাই হয় রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ.

 .

 .

কল্পনা করুন একটি ভয়ঙ্কর দৃশ্যপট—একজন রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা, যিনি মন্ত্রী পর্যায়ের মর্যাদা পান, তার ব্যাগে অ্যামোনিশনের ম্যাগাজিন, আর তা নিয়ে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছেন! যদিও বাস্তবে আসিফ মাহমুদ তৃতীয় ও চূড়ান্ত নিরাপত্তা চৌকিতে ধরা পড়েছেন, কল্পনা করুন যদি সেটিও না হতো—তাহলে কি ঘটতো? এই প্রবন্ধে আমরা সেই সম্ভাব্য বিপর্যয়ের এক বর্ণনা ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করবো।.

 .

পরিস্থিতির পটভূমি: ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একজন ভিআইপি হিসেবে প্রবেশ করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। বাংলাদেশে যারা উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক পদে আছেন, তাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষ সুবিধা থাকে—বিশেষ টার্মিনাল, শিথিল চেকিং, প্রটোকল। এই ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় নিরাপত্তা চৌকিতে কোনো রকম তল্লাশি বা জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই তিনি পার হয়ে যান।.

 .

এটা একদিকে শুধু নিরাপত্তা ত্রুটি নয়, বরং এটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা কিছু কর্মকর্তার ভয়ঙ্কর গাফিলতির নিদর্শন। এই দুই চেকপয়েন্ট যদি দায়িত্বশীল হতো, তাহলে হয়তো শেষ চেকিং পর্যন্ত গড়াতোই না।.

 .

যদি তৃতীয় চেকপয়েন্টেও ধরা না পড়তেন?: ধরা যাক, শেষ চেকপয়েন্টেও আসিফ মাহমুদ ধরা পড়েননি। তার মানে, একটি জীবন্ত অ্যামোনিশন ম্যাগাজিনসহ একজন ভিআইপি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে উঠে পড়েছেন। যথারীতি বিমান ঢাকা থেকে উড়াল দেবে, সাড়ে আট-নয় ঘণ্টার মধ্যেই ইস্তাম্বুল পৌঁছাবে। তুরস্কের মতো একটি দেশের ইমিগ্রেশন সিস্টেম, বিশেষ করে আতাতুর্ক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত কঠোর। সেখানে স্ক্যানিং, ব্যাগ চেকিং, পাসপোর্ট যাচাইসহ নানা প্রক্রিয়ায় যাত্রীদের পরীক্ষা করা হয়।.

 .

এমন পরিস্থিতিতে আসিফ মাহমুদের ব্যাগ থেকে একটি অ্যামোনিশন ম্যাগাজিন পাওয়া গেলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হতো।.

 .

তুরস্কে কী ঘটতো?: তুরস্কে এমন একটি ঘটনা ঘটলে তা নিছক এক ব্যক্তির ভুল হিসেবে দেখা হতো না। এটি হতো এক রাষ্ট্রীয় লজ্জা। প্রথমত, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী অবৈধ অস্ত্র/অস্ত্রের খুচরা যন্ত্রাংশ বহনের অপরাধে যেকোনো দেশের যাত্রীকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়তে হয়। ফলে আসিফকে তুরস্কের আইনে আটক করে বিচারের মুখোমুখি করা হতো।.

 .

তুরস্ক সরকারের কাছে এটি নিছক অপরাধ নয়, বরং একটি ‘সারভেইলেন্স ব্রীচ’। তাতে আসিফের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হতে পারত—অবৈধভাবে যুদ্ধোপকরণ বহনের অভিযোগে।.

 .

বাংলাদেশের ভাবমূর্তির কি হতো?: এই ঘটনার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া হত ভয়ঙ্কর। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হতো— “Bangladeshi minister-level advisor caught with ammunition at Istanbul airport.” বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও স্যোশাল মিডিয়ায় বাংলাদেশকে ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠতো:.

 .

⚫ কীভাবে এমন একজন ব্যক্তি দেশ ছাড়লো এই ধরনের জিনিসপত্রসহ?.

⚫ বাংলাদেশের বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আদৌ কার্যকর আছে তো?.

⚫ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বিমান নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি কী?.

 .

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তখন এক বিশ্রী বিপদে পড়তো। সরকারকে তখন কূটনৈতিক চ্যানেলে তুরস্কের কাছে ব্যাখ্যা দিতে হতো, নানা দেন-দরবারে লিপ্ত হতে হতো আসিফ মাহমুদের মুক্তির জন্য।.

 .

আসিফের ব্যক্তিগত পরিণতি: আসিফ মাহমুদের নিজস্ব পরিণতিও অত্যন্ত জটিল হতো। প্রথমত, তুরস্কের কারাগারে তাকে দীর্ঘদিন কাটাতে হতো। দ্বিতীয়ত, তার নামে মামলা চলতো এবং তার পাসপোর্ট জব্দ হতো। তৃতীয়ত, যদি প্রমাণ হতো যে এটি ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত হলেও, তা ব্যাখ্যা করতে হতো তুরস্কের কঠোর আদালতের সামনে। তাকে আইনি সাহায্য দিতে হতো বাংলাদেশ মিশনকে।.

 .

এমনকি মুক্তি পেলেও, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার পাসপোর্ট ‘ফ্ল্যাগড’ হতো, অর্থাৎ ভবিষ্যতে যেকোনো দেশে প্রবেশ করতে হলে তাকে বাড়তি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হতো।.

 .

রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া: বাংলাদেশে এই ঘটনার প্রভাব পড়তো রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে। সর্বত্র প্রশ্ন উঠতো—কেন দুইটি চেকপয়েন্ট তাকে ছেড়ে দিলো? এয়ারপোর্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হতো, তদন্ত কমিটি গঠন হতো এবং জনমনে তৈরি হতো নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা। মিডিয়ায় যেভাবে কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ পায়, তাতে সরকারকে রীতিমতো ব্যাকফুটে চলে যেতে হতো।.

 .

এই ঘটনার তাৎপর্য: এই কল্পিত ঘটনাটি আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়—নিরাপত্তা ব্যবস্থা কখনোই ব্যক্তি বিশেষের প্রোটোকলের কাছে নতি স্বীকার করতে পারে না। একজন ভিআইপি হওয়া মানে এই নয় যে তিনি নিরাপত্তার ঊর্ধ্বে। বরং, তার ব্যর্থতা বা অপরাধ গোটা জাতির মুখ পুড়াতে যথেষ্ট।.

 .

এই ধরনের ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে—.

⚫ আমাদের বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এখনও দায়সারা মনোভাব রয়েছে।.

⚫ কর্তব্যরত কর্মকর্তারা ভিআইপি দেখে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান, যা ভয়ঙ্কর ফলাফল ডেকে আনতে পারে।.

⚫ রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষার জন্য সবাইকে সমান চোখে দেখে দায়িত্ব পালন জরুরি।.

 .

আসিফ মাহমুদ ধরা পড়েছেন, ভালো কথা। কিন্তু যদি না পড়তেন? তাহলে যা হতো, তা কল্পনার চেয়েও ভয়ঙ্কর। সেই ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির জীবনের মোড় বদলে দিত না, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ভাবমূর্তিকেও ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতো।.

 .

এই কল্পনা বাস্তবে রূপ না নিলেও, আমাদের জন্য এটি এক জোরালো সতর্কবার্তা। এখনই সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভিআইপি কালচারের বাইরে এনে একক নীতিতে পরিচালনার। নিরাপত্তার নামে ‘শোভা’ নয়, চাই দায়িত্ব ও নিষ্ঠা। কারণ একটি ছোট ভুল, পুরো জাতিকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।.

 .

লেখক: শফিউল বারী রাসেল, (সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক). .

ডে-নাইট-নিউজ /           || শফিউল বারী রাসেল ||

সম্পাদকীয় বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ