• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সহপরিবারে হত্যা ও জাতীর অপূরণী ক্ষতি


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ আগষ্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:৪৪ পিএম;
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সহপরিবারে হত্যা ও জাতীর অপূরণী ক্ষতি
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সহপরিবারে হত্যা ও জাতীর অপূরণী ক্ষতি

­­­১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসায় সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন। সেদিন তিনি ছাড়াও নিহত হন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। এছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনসহ নিহত হন আরো ১৬ জন।.

ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু পুত্র শেখ রাসেল; পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী কামাল; ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি। বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসেন কর্নেল জামিলউদ্দীন, তিনিও তখন নিহত হন। দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানা।.

১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল তখন দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালন করা জন্য  প্রজ্ঞাপন জারী করে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।.

কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এসে ২০০২ সালে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে পরে ছয় বছর পর হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে  ১৫ই অগাস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পুর্নবহাল হয়।.

তখন ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রপতি ডঃ ইয়াজুদ্দিন আহমেদ এবং প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ফখরুদ্দীন আহমদ ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ গিয়ে টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সেসময় সেখানে তিন বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।সেই থেকে প্রতি বছর ১৫ আগস্ট জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল সদস্যদের, পালিত হয় জাতীয় শোক দিবস। জাতীয় শোক দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি জাতীয় দিবস। প্রতিবছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবসটি শোকের সাথে পালন করা হয়।এ দিবসে কালো পতাকা উত্তোলন ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিবসের উৎপত্তি।.

আর এই দিনটি জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অনেক গুলো কারণের মধ্যে অন্যতম কারন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা যিনি ১৯৪৯ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ দিন বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি টানা ৭৮৭ দিন বঙ্গবন্ধু কারা ভোগ করেন। এরপর ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পরও বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে যেতে হয়। এ দফায় বঙ্গবন্ধু ২০৬ দিন কারা ভোগ করেন।সর্বমোট যৌবনে ১৪ টি বছর দেশের  গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য জেলে কাটাতে হয়েছে  শত বার মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা নিরস্র বাঙালী জাতিকে নেত্রিত্ব দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দূরবীক্ষ কবলিত দেশকে সুসংগঠিত রেখে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার অবশেষে দেশি বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রে বেঈমান দেশদ্রোহীদের হাতে সহ পরিবারে নির্মম ভাবে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে অঙ্কুরে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে  তা বাঙালী বুঝতে পেরেই দ্বায় মোচনের জন্যই সারা বাংলাদেশে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে এই দিনটি পালন করে আসছে দল মত নির্বিশেষে।.

সে দিন ঘাতকেরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে সহ পরিবারে খুন করেননি সে দিন ঘাতকেরা বাঙালী জাতিকে খুন করে ছিলো বাঙালী জাতিকে অঙ্কুরে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শুধু মাত্র ব্যক্তিনয়   বঙ্গবন্ধু ছিলো একটি জাতী,জাতীর কর্ণধার জাতীর পিতা শত সমবাক্যে বিশেষায়িত তাইতো সর্ব কণ্ঠে আজ বেজে উঠে বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা গৌরি বহমান তত দিন রবে কীত্তি তোমার বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তার যথার্থ অনেক গুলো কারন বিদ্যমান  বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে পিছিয়ে ফেলা হয়েছে  বাংলাদেশকে তার শিকারুক্তি বহিরপ্রকাশে সহমতে ১৫ আগস্ট সারা বাংলার গ্রাম পাড়া মহল্লায় বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফেরাতে দোয়া মাহফিল আয়োজনে যথাযত মর্যাদায় এই দিনটি পালন করা হয়।.

১৯৪৭-১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ পরিক্রমা ভারতে ব্রিটেনের সর্বশেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতাদের সাথে এক বৈঠকে ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা সম্বলিত 'হোয়াইট পেপার' বা 'শ্বেতপত্র' প্রকাশ করেন। শ্বেতপত্রে ভারতবর্ষ বিভক্তির রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছিল। ওই বৈঠকে সব দলের নেতৃবৃন্দ পরিকল্পনা মেনে নেন।.

১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে বাংলা ও ভারতের পৃথকীকরণের মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশের সীমানা প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের ফলে এই অঞ্চলটি নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে পরিণত হয়।.

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ব্রুস রিডেল তার ‘ডেডলি এমব্রেস‘ বইতে লিখেছেন পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম থেকেই “পাকিস্তানের কাছে বাংলার গুরুত্ব ছিল দ্বিতীয়“ এবং বাঙালিদের “দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক“ হিসাবে দেখা হতো।.

কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক মোহাম্মদ নিয়াজ আসাদুল্লাহ ২০০৬ সালে তার এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পশ্চিমের চেয়ে বেশি হওয়া স্বত্বেও সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দে বৈষম্য কতটা পাহাড় সমান ছিল।.

পাকিস্তানের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৫০-৫৫), কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দের মাত্র ২০ শতাংশ পেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৬৫-৭০) সেই বরাদ্দ বাড়লেও তা হয়েছিল ৩৬ শতাংশ ।.

মি. আসাদুল্লাহ লিখেছেন, একেতো বরাদ্দ অনেক কম দেওয়া হতো, তারপরও পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রকাশ্যে এবং গোপনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে তহবিল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জটিল সব কর ব্যবস্থায় আড়ালে নানা খরচ দেখিয়ে এই তহবিল নিয়ে যাওয়া হতো। এক হিসাবে ২৫ বছরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাচার এই টাকার পরিমাণ ছিল ২৬০ কোটি ডলার।.

বছরের পর বছর বরাদ্দে এই বৈষম্যের শিকার হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের অবকাঠামো, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা। ভারত ভাগের সময় পাকিস্তানের দুই অংশে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ছিল প্রায় সমান। কিন্তু ১৯৭১ সালে এসে পূর্ব পাকিস্তানে ২৪ বছরের আগের তুলনায় প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা কমে যায়। অথচ পশ্চিমে ১৯৬০ এর দশকে এসেই প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা তিনগুণ বেশি হয়ে যায়।.

উনিশ'শ একান্ন সালে পূর্ব পাকিস্তানে গ্রাজুয়েটের সংখ্যা ছিল ৪১০০০ আর পশ্চিমে ছিল ৪৫০০০। কিন্তু দশ বছর পর ১৯৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে গ্রাজুয়েট তৈরি হয় ২৮০০০, যেখানে পশ্চিমে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৪০০০-এ। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা শেষ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেখানে পূর্ব পাকিস্তানে ঐ দশ বছরে ৩২ শতাংশ কমে গিয়েছিল, পশ্চিমে বেড়েছিল ২১ শতাংশ। সরকারি বৃত্তি, অনুদান প্রধানত পেয়েছে পশ্চিমের শিক্ষার্থীরা,কারণ বিজ্ঞাপন যখন পূর্বে প্রকাশিত হত তখন আবেদনের সময় থাকতো না।.

চাকরির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এবং একাধিক গবেষণায় বলা হয়েছে সুযোগ প্রচারে এই দেরি করা হতো উদ্দেশ্যমুলকভাবে। এই সকল উল্লেখ যোগ্য কারণ ছাড়াও বাণিজ্য ঘাটতি অবকাঠামো উন্নয়ন ধীরগতি বুঙ্গুর অর্থনীতি ইত্যাদি ।.

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রীসভা বৈঠকের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল। একটি রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ কালে দেশের ধন-সম্পদ ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। সদ্য-স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠন গঠন ছিল সরকারের জন্য প্রাগ্রাধিকারমূলক কর্তব্য। এছাড়া একটি প্রাদেশিক সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নীত করার কাজ অবধার্য হয়ে পড়েছিল।.

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভের পরে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক ছিল। ১৯৭০-এর বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা (যাতে প্রায় আড়াই লক্ষ বাঙালির মৃত্যু হয়) কাটিয়ে না উঠতেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। দেশের অবকাঠামোসমূহের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এছাড়া যুদ্ধের কারণে দেশটির কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও পরিবহন খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। নতুন এই দেশের জনঘনত্ব ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উচ্চ ছিল এবং এর সিংহভাগ নাগরিকই ছিল নিরক্ষর, অপ্রশিক্ষিত ও বেকারত্বের শিকার। যুদ্ধের কারণে দেশের আবশ্যকীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার প্রায় ফুরিয়ে গিয়েছিল। নবপ্রতিষ্ঠিত দেশে কাজে লাগানোর মতো প্রাকৃতিক সম্পদও ছিল অপ্রতুল। ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনকারী প্রায় ১ কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসনও ছিল এক বিরাট সমস্যা। এর রকম একটি দেশটির পুনর্গঠন ছিল একটি চ্যালেঞ্জ।.

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি বলতে কিছুই ছিল না। রাস্তাঘাট, রেললাইন, সেতু-কালভার্ট, বন্দর প্রভৃতি বিধ্বস্ত। ব্যাংকগুলো টাকাশূন্য। তদুপরি দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা, প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন, পশ্চিম পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশী সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন, দেশের সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন পুনর্গঠন, অফিস-আদালত স্থাপন ও সচল করা এবং তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফেরত পাঠানো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক পুনর্গঠন, ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করা ইত্যাদি কাজ করতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। এছাড়া জাতীয় সংসদ সচল করা এবং গণপরিষদ প্রতিষ্ঠা করে সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ, দেশ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন আইন প্রণয়ন, দশ মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন প্রভৃতি গুরুদায়িত্ব পালন করে বঙ্গবন্ধুর সরকার। নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংকট, অনিয়ম, দুর্নীতি মোকাবেলা করে দেশকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের রূপরেখাও তিনি প্রণয়ন করেছিলেন। এ রূপরেখার প্রতিফলন দেখা যায় ১৯৭৩ সালে প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। এ পরিকল্পনায় তিনি কৃষি, শিল্প উৎপাদন এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি জোর দেন। কৃষির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ শিল্প উৎপাদনে গুরুত্ব দেয়া হয়। কতিপয় অসৎ ব্যক্তি ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর কারসাজিতে ১৯৭৪ সালে দেশের কোনো কোনো স্থানে সাময়িক দুর্ভিক্ষ দেখা দিলেও অল্প সময়ের মধ্যে এটি মোকাবেলা করে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করতে পেরেছিলেন। ১৯৭২-৭৩ সালে জিডিপির আকার ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার। স্বাধীনতা অর্জনের সময়ে দেশের মাথাপিছু আয় যেখানে ছিল ৯৪ ডলারের মতো, সেখানে ১৯৭৫ সালে মাথাপিছু আয় প্রায় তিন গুণ বেড়ে ২৭৩ ডলারে দাঁড়ায়।.

স্বাধীনতার পর নবনির্বাচিত মুজিব সরকার গুরুতর কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, যার মধ্যে ছিল, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর পুনর্বাসন, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা উপকরণ সরবরাহ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াবলি। এছাড়া, ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এবং যুদ্ধের ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও চরমভাবে ভেঙে পড়েছিল। অর্থনৈতিকভাবে সরকার একটি বিস্তৃত পরিসরের জাতীয়করণ কার্যক্রম হাতে নেয়। বছর শেষ হতেই, হাজার হাজার বাঙালি পাকিস্তান থেকে চলে আসে, হাজার হাজার অবাঙালি পাকিস্তানে অভিবাসিত হয় এবং এরপরও হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে রয়ে যায়। প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসন করার জন্য বৃহৎ সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে এবং দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ হওয়ার আশঙ্কাকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চ-বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষি, গ্রামীণ অবকাঠামো ও কুটির শিল্প উন্নয়নে প্রাগ্রাধিকারমূলক সরকারি অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে চালের দাম আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে একটি দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয়, যা ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ নামে পরিচিত।.

১৯৭৪ সালে আমাদের মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৭ শতাংশ মতান্তরে ৯.৬ শতাংশ। আজ বলতে দ্বিধা নেই, প্রবৃদ্ধির এ ধারা যদি অব্যাহত থাকতো তাহলে আমরা ১৯৯৬-৯৭ সালেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারতাম। আর এখন আমাদের অবস্থান থাকতো অনেকটা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে।.

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমলে। দেশের প্রথম বাজেট দেয়া হয় ১৯৭২-৭৩ সালের অর্থবছরে। এরপর ১৯৭৪ সালে দেশের মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৭ শতাংশ মতান্তরে ৯.৬ শতাংশ। স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭০-এর দশকে সর্বোচ্চ ৫৭% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তবে এ প্রবৃদ্ধি বেশিদিন টেকেনি। ১৯৮০-এর দশকে এ হার ছিলো ২৯% এবং ১৯৯০-এর দশকে ছিলো ২৪%।জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এসব কথা উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।.

দেশি-বিদেশি হাজারো ষড়যন্ত্রের মুখেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যখন অপ্রতিরোধ্য তখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর সূচিত গণমুখী অর্থনৈতিক অগ্রগতির অপ্রতিরোধ্য ধারা অকস্মাৎ রুদ্ধ হয়ে যায়। ১৫ আগাস্টে বঙ্গবন্ধুকে সহ পরিবারে খুন করা হয়নি সেইদিন বাংলাদেশকে খুন করা হয়েছিল মূলত।.

লেখক -অপু ওয়াহিদ. .

ডে-নাইট-নিউজ / স্টাফ রিপোর্ট, কবির হোসেন (শান্ত )

জাতীয় বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ