• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২৯ আগষ্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

বিশ্বনাথের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো নিজেই রোগী, ডাক্তার ও ঔষধ সংকটে বেহাল দশা


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৮ আগষ্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:০০ পিএম;
বিশ্বনাথের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো নিজেই রোগী, ডাক্তার ও ঔষধ সংকটে বেহাল দশা
বিশ্বনাথের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো নিজেই রোগী, ডাক্তার ও ঔষধ সংকটে বেহাল দশা

মো. সায়েস্তা মিয়া, বিশ্বনাথ প্রতিনিধিঃ প্রায় আড়াই লক্ষ জনসংখ্যার জন্য একটি মাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৫টি সাব সেন্টার, একটি ফ্যামেলি প্লানিং সেন্টার, ও রয়েছে ১৯ টি কমিউনিটি ক্লিনিক। জনসংখ্যার তুলনায় উপজেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল বলে বিশেষজ্ঞদের দাবী। ১ টি পৌরসভা ও উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এগুলো নগন্য ও চিকিৎসা সেবায় পিছিয়ে থাকা জনপদের তালিকায় গণ্য করা যায় এই উপজেলাকে। নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বলে উপজেলা বাসীর মনে রয়েছে ক্ষোভ ও কষ্ট। চিকিৎসা কেন্দ্র ও চিকিৎসার মান বাড়ানো সহ নানাবিধ দাবী দীর্ঘদিনের হলেও দাবী অপূরনই থাকছে যুগের পর যুগ। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের দিকে তাকালে এই উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা আকাশ পাতাল ফারাকে ভরপুর । উপজেলা বাসী আশার আলো দেখেন হয়তো ভবিষ্যতে এর সমাধান হবে।.

 .

উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান চিত্র নিয়ে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ব্যাপক অনিয়ম, অবহেলা, ঔষধ সংকট, ডাক্তার সংকট, পরিস্কার পরিচ্ছন্নহীতা, সেবা গ্রহীতাদের সেবা না পাওয়া সহ এক মহামারী পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঔষধ চুরি করে বিভিন্ন ফার্মেসীতে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি সাব স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপজেলা কমপ্লেক্সে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম এখন নিয়মে দিন পার করছে। হাসপাতাল ও সাব স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো নিজেই এখন রোগী সেজে আছে। ডাক্তার নাই, ঔষধ নাই, সৃষ্ট পদের কর্মকর্তা - কর্মচারী, আয়া, ভোয়া, গার্ড না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সেবা প্রার্থীরা। বেসরকারি চিকিৎসা শিবিরের প্রতি ঝুঁকছেন তারা। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বেসরকারি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ মরার উপর খাঁড়ার ঘা বলে তাদের অভিমত। সাধারণ মানুষ সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে প্রাথমিক ধরনের রোগবালাইয়ের দীর্ঘতা নিয়ে কষ্টে করছেন জীবন যাপন তারা। সময়ের সাথে দীর্ঘদিন রোগব্যাধি বয়ে বেড়ানোয় অর্থনৈতিক সংকট, চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে এই জনপদের বাসিন্দারা। এক্ষুনি যথাযথ সমাধানের পথে না এগুলে ভবিষ্যত বিপর্যয় থেকে এই জনপদের বাসিন্দাদের উদ্ধার করা যাবে না নিশ্চিত বলা যায়। .

 .

২১৪.৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় ১ টি ৫০ শয্যর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন সুমন এর দেওয়া তথ্যমতে এখানে ৫জন ডাক্তারের পদ থাকলেও আছেন মাত্র ২ জন ডাক্তার।১ নং লামাকাজী ইউনিয়নের দীঘলী সাব স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও  দশঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, অলংকার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো ডাক্তারই নাই। এই কেন্দ্রেগুলোতে শুধু আছেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও মিড ওয়াইফ পোস্টে কোনোটিতে একজন কোনোটিতে ২ জন চিকিৎসক। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫-২০ জন রোগীর আগমন ঘটে। ঔষধ ও ডাক্তার না থাকায় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে রোগীদের। .

 .

বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ( FWV) নিলিমা রাণী দাসের সাথে কথা হলে তিনি জানান এই কেন্দ্রে ৩ বছর যাবৎ কেন্দ্র ইনচার্জ বা ডাক্তার নাই। সরজমিনে দেখা গেছে তিনি ছাড়া আরো একজন সখিনা আক্তার নামের মিড ওয়াইফ কর্মকর্তা দুই তলা ভবন কেন্দ্রের উপরতলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। খাতাপত্র ঘেটে দেখা গেছে দৈনিক গড়ে ২ জনের বেশি কোনো রোগীই এখানে আসেন না। রোগী না আসার কারণ জানালেন, মানুষ ঔষধ পায় না, কেন্দ্রে কোনো ঔষধ নাই। তবে বছর দেড়েক আগে প্রচুর রোগী আসতো। কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর এলোমেলো আসবাবপত্র, ময়লা আবর্জনা দেখলে বুঝা যায় কেন্দ্রটি নিজেই রোগী হয়ে আছে। আয়া ভোয়া গার্ড না থাকায় এই অবস্থা বলে নিলিমা রাণী দাবী করেন।.

 .

১ নং লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের দিঘলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে যা জানা গেল তাতে চোখ কপালে উঠার মত। ১ বছরে তিন বার চুরি হয়েছে কেন্দ্রটি। গত বছর ৫ আগস্ট পরবর্তী চুরির ঘটনা গুলো ঘটে। থানা পুলিশকে অবগত করা হয় কিন্তু কোন চোর ধরা পড়ে না, মালামাল ও উদ্ধার হয় নাই। কেন্দ্রে মোট ৪টি পোস্ট আছে কিন্তু চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ২ জন। একজন উপসহকারী ও একজন মিড ওয়াইফ কর্মকর্তা। .

এই কেন্দ্রটি উপজেলার উত্তর সীমান্ত ঘেষা হওয়ার কারণে প্রশাসনের জোর নজরদারি থাকেনা বিধায় সব সময় কর্মরত ডাক্তাররা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এমটি জানান কেন্দ্রের একজন উপসহকারী চিকিৎসক মোঃ আকিজ উদ্দিন। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করতে এবং কেন্দ্রটি সিসিটিভির আওতায় আনা হলে নির্বিঘ্নে সেবা দিতে পারতেন এমন দাবী তাঁর।.

এই কেন্দ্রে প্রতি মাসে গড়ে ১০ থেকে ১৫ টি প্রসূতি সেবা সহ রোজ ৪০ থেকে ৫০ জন বহির্বিভাগীয় সেবা গ্রহীতা আসেন কিন্তু ঔষধ না পাওয়ায় এর সংখ্যা এখন ৩ -৫ জনে এসে ঠেকেছে। ডাক্তার আকিজ উদ্দিন জানান, প্রায় ১০ মাস ধরে ঔষধ স্বল্পতার কারনে রোগীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমি ২ বছর ধরে এই কেন্দ্রে আছি। আগে রোগীর চাপ সামলানো যেত না কিন্তু এখন যারা আসে তাদের ঔষধ দিতে পারি না। এজন্য রোগীর চাপ কমছে। .

 .

লামাকাজী ইউনিয়নের ভুরকী বাজারে আরেকটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রে ৫ জন কর্মকর্তার বদলে আছেন ৩ জন মাত্র। কথা হয় এই কেন্দ্রের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক এ কে এম শামসুজ্জামান মিলন এর সাথে। তিনিও জানান ঔষধের স্বল্পতার কারনে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। এখন তারা বসে বসে গল্পগুজব করে সময় পার করেন। এসময় ৫ জন সহকারী স্বাস্থ্যকর্মী মিলে গল্প করতে দেখা যায়। পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাগণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতার পরামর্শ দিবেন, তা না করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সময় পার করছেন কেন এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, শুধু কনডম ছাড়া আর কোন সরকারি ঔষধের উপকরণ না থাকায় মাঠে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তারা। এই কেন্দ্রে দেখা যায় কোনো রোগীই নেই। ঘন্টা খানেক পর একজন মহিলা রোগীর দেখা পাওয়া যায়। তিনি ও জানান, রোগীরা এলে ঔষধ পায়না, তাই কেউ আসতে চায় না।.

 .

উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কথা হয় সেবা গ্রহীতা রাগীব আলী, আব্দুল করিম, নিছমা বেগম ও জয়নব বিবির সাথে, তারা জানান ঔষধ নাই, ডাক্তার নাই। রাগীব আলী বলেন,  আমি ডায়াবেটিস সহ একাধিক রোগের নিয়মিত রোগী কিন্তু কিছু ঔষধ পেয়েছি , বাকী গুলো বাহির থেকে কিনে নিতে বলেছে।.

 .

বিশ্বনাথ উপজেলা সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ননী গোপাল সরকারের তথ্য মতে উপজেলা জুড়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ৪২ জনের (এফডাব্লিউএ)  পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৩০ জন। লামাকাজী ইউনিয়নে ৫ জন, খাজাঞ্চি ইউনিয়নে ৫ জন, অলংকারী ইউনিয়নে ৪ জন, রামপাশা ইউনিয়নে ৪ জন, দৌলতপুর ইউনিয়নে ৫ জন, দেওকলস ইউনিয়নে ৩ জন ও দশঘর ইউনিয়নে ২ জন রয়েছে। ঔষধের উপকরণ সংকটের কথা স্বীকার করেন তিনি। .

 .

বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ দেলোয়ার হোসেন সুমন জানান ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে দৈনিক ৩ শত থেকে ৪শত রোগী ইনডোর ও আউটডোর বিভাগে প্রতিদিন সেবা নিতে আসে, কিন্তু জনবল সংকটে সেবা প্রদান ব্যহত হচ্ছে। ঔষধ স্বল্পতা রয়েছে, এ্যাম্বুলেন্স চালকের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। .

 . .

ডে-নাইট-নিউজ /

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ