
জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার হানা: তিন দিনে হাসপাতালে ৩২২ রোগী.
শয্যা ফাঁকা নেই, করিডোরেই চলছে চিকিৎসা — উৎসবের খাবার ও পানি নিয়ে বিতর্ক.
.
জয়পুরহাট প্রতিনিধি : জয়পুরহাট শহরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত তিন দিনে জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২২ জন ডায়রিয়া রোগী। বয়স্ক ও নারী রোগীর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালের ওয়ার্ড ও করিডোরজুড়ে এখন শুধু স্যালাইনের বোতল আর অসুস্থ মানুষের গোঙানির শব্দ।.
.
.
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১৩৮ জন রোগী। পরদিন রোববার ভর্তি হয় আরও ১০১ জন এবং সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৮৩ জন। তীব্র রোগীর চাপে চিকিৎসক ও নার্সদের একপ্রকার হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদিও সোমবার থেকে কিছুটা কমেছে রোগীর ভিড়, তবু হাসপাতালজুড়ে এখনো চলছে চরম ব্যস্ততা।.
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি নেই। করিডোরের মেঝেতেও রোগীদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।.
জয়পুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধানমন্ডি মহল্লার বাসিন্দা জেসমিন আক্তার (৬০) গত শনিবার থেকে হাসপাতালে ভর্তি। তার স্বামী নূর মোহাম্মদ বলেন, স্ত্রীর বমি আর পাতলা পায়খানা বন্ধই হচ্ছে না। তিন দিন হলো এখানে আছি। ডাক্তাররা চেষ্টা করছেন, কিন্তু পুরো হাসপাতালজুড়ে কেবল ডায়রিয়ার রোগী।.
একই এলাকার রোগী গোপাল প্রসাদ আগরওয়ালা বলেন, আমি রোববার ভর্তি হয়েছি। আমাদের ওয়ার্ডের বেশিরভাগই পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ। আমার মনে হয় পৌরসভার পানি থেকেই সমস্যা।.
.
.
তবে ধানমন্ডি মহল্লার মরিয়ম বেগমের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। তিনি বলেন, আমরা পৌরসভার পানি ব্যবহার করি না। তারপরও আমার তিনজন আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি।.
পাঁচবিবির আয়মা রসুলপুরের নুর ইসলাম জানান, আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াতে গিয়ে খাবার খাওয়ার পর আমার বাবা আর দুই ভাই একসাথে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। .
এদিকে ক্ষেতলালের মহব্বতপুর গ্রামের পারভিন আক্তার পূজার মেলায় মিষ্টান্ন খাওয়ার পর মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তার মা বলেন, মেয়ের কিডনির সমস্যা আছে। তিন দিন ধরে বমি-পায়খানা বন্ধ হচ্ছে না। ডাক্তাররা বলছেন, অবস্থা গুরুতর।.
হাসপাতালের সহকারী চিকিৎসক ডা. মো. হারিছ বলেন, তিন দিন ধরে হঠাৎ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অধিকাংশই পৌর এলাকার বাসিন্দা। পৌরসভার পানি পরীক্ষা করলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।.
অন্যদিকে জয়পুরহাট পৌরসভার সেনেটারি ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ জানান, অভিযোগের পর আক্রান্ত এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করে বগুড়ায় ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। পানিতে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। যদি পানির কারণে হতো, পুরো পৌরসভাই আক্রান্ত হতো।.
.
.
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, গত তিন দিন ধরে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি ছিল, এখন কিছুটা কমেছে। আমাদের ধারণা, পূজা উৎসবকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মেলায় বিক্রি হওয়া খোলা খাবারের কারণেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে।.
হঠাৎ এভাবে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় শহরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। অনেক পরিবার এখন ঘরের পানি ফুটিয়ে পান করছে, খাবারেও বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে। তবুও ভয় কাটছে না—কারণ জয়পুরহাটের হাসপাতালজুড়ে এখনো প্রতিটি স্যালাইনের ফোঁটা যেন একেকটি জীবনের শেষ আশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।.
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: