
.
বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন—তরুণরা ছিলো অগ্রভাগে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের অংশগ্রহণের ধরন, প্রতিবাদের ভাষা ও আচরণ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, তরুণরা প্রতিবাদ করছে কুরুচিপূর্ণ শ্লোগানে, উদ্দেশ্যহীন মিছিলে এবং কখনো কখনো সন্ত্রাস বা চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত হয়ে।.
ঐতিহাসিকভাবে প্রতিবাদের ভাষা ছিল অনুপ্রেরণাদায়ক। “জয় বাংলা,” “তোমার আমার ঠিকানা”—এসব স্লোগান সমাজকে এক করেছে। বর্তমানে অনেক স্লোগান হয়ে উঠছে অশ্লীল, বিদ্বেষপূর্ণ এবং তামাশামূলক। এটি কেবল রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবক্ষয় নয়, বরং সামাজিক নৈতিকতারও ভাঙন।.
সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, যুবসমাজের বিপথগামিতা সাধারণত তিনটি কারণে ঘটে—
১. পরিবারে শৃঙ্খলার অভাব,
২. শিক্ষাঙ্গনের রাজনৈতিক প্রভাব,
৩. ভোগবাদী সমাজব্যবস্থার টান।.
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই তিনটির প্রতিফলন স্পষ্ট। বাবা-মা সন্তানের সঙ্গে সময় দিতে পারছেন না; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার জায়গায় পরিণত হয়েছে রাজনীতির আস্তানায়; আর ভোগবাদ তরুণদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে সহজ লাভ ও দ্রুত খ্যাতির দিকে।.
.
.
রাজনৈতিক দলগুলো তরুণদের ব্যবহার করছে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে। দিকভ্রান্ত তরুণদের মিছিলে নামিয়ে দেওয়া হয়, শ্লোগান মুখস্থ করানো হয়, এমনকি সংঘর্ষে ঠেলে দেওয়া হয়। ফলে তরুণদের মধ্যে যে সৃজনশীল শক্তি থাকা উচিত, তা রূপ নেয় ধ্বংসাত্মক শক্তিতে।.
এই পরিস্থিতিতে শুধু তরুণদের দায়ী করলে চলবে না। পরিবার, শিক্ষা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি—সবাই সমানভাবে দায়ী। আবার সাধারণ মানুষও প্রশ্রয় দিয়ে পরোক্ষভাবে এই প্রবণতাকে টিকিয়ে রেখেছে।.
পরিবারে নৈতিক শিক্ষা ও সময় বিনিয়োগ বাড়ানো।.
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করা।.
আন্দোলন ও প্রতিবাদকে সাংস্কৃতিক শৃঙ্খলার ভেতরে আনা।.
রাজনৈতিক দলের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।.
তরুণদের সৃজনশীল কাজে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া।.
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম একদিকে যেমন সম্ভাবনার প্রতীক, অন্যদিকে দিকভ্রান্ত হলে ভয়ংকর ক্ষতির কারণ। প্রতিবাদের ভাষা যদি শালীন ও শক্তিশালী হয়, তবে তা জাতিকে পথ দেখাতে পারে। কিন্তু অশ্লীল ও অর্থহীন শ্লোগান কেবল বিভ্রান্তি তৈরি করে। তাই আজ প্রয়োজন নতুন প্রজন্মকে সঠিক পথে ফেরানো, এবং প্রতিবাদের ভাষাকে পুনরুদ্ধার করা।.
.
লেখক: শফিউল বারী রাসেল (কবি, গীতিকার, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষক).
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: