• ঢাকা
  • রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৯ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ শীর্ষ সন্ত্রাসী তাপসের নামে


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: বুধবার, ০৩ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫০ পিএম;
পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ শীর্ষ সন্ত্রাসী তাপসের নামে
পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ শীর্ষ সন্ত্রাসী তাপসের নামে

দৈনিক সকালের সময়ে সংবাদ প্রকাশের পরে এমপির লোক এবং আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দেয়া বরগুনা জেলার সেই শীর্ষ সন্ত্রাসী তাপস এখন মাথার লম্বা চুল কেটে ছোট করছে। সে এখন কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিহত জাকিরের ভাই পরিচয় দিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে। "পাথরঘাটায় এমপির লোক পরিচয়ে সন্ত্রাসী তাপসদের উত্থান" শিরোনামে শীর্ষ সন্ত্রাসী তাপসের ওপর দৈনিক সকালের সময়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরেই সন্দেহজনক ভাবে সে দৈনিক সকালের সময়ের বিশেষ প্রতিনিধি শামীম আহমদকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। হুমকির বিষয়টি শামীম আহমদ বরগুনা পুলিশ সুপার এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টারে লিখিতভাবে জানিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করছে বরগুনা জেলা পুলিশ। শামীম আহমদের সাথে তার চাচা মজিদ হাওলাদার যোগাযোগ থাকতে পারে এমন সন্দেহের কারনে সে নিজের আপন চাচা মজিদ হাওলাদারকে বাড়ির থেকে উৎখাতের হুমকি দেয়। জাকিরের বাবা মজিদ হাওলাদার বলছেন তাপস আমার ছেলে জাকিরের চাচাতো ভাই হলেও রাজনৈতিক আদর্শে দুজন দুই মেরুর লোক। আওয়ামী লীগ নেতা মজিদ হাওলাদার আজ দৈনিক সকালের সময়ের সাথে টেলিফোনে বলছেন-    "তাপস সন্ত্রাসী ওর বাপ কাদের সুদের ব্যাবসায়ি এবিষয়ে পত্রিকার সংবাদ ঠিক আছে।.

 .

পত্রিকার সাহস আছে সন্ত্রাসীকে সন্ত্রাসী বলার। গ্রামের সাধারণ জনগণের সেই সাহস নেই। ওরা নৌকায় ভোট দেয় না, তাপস এবং ওর বাবা কাদের বিএনপির লোক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে মানুষের কেনুর ভয়ে তাপস আমার ছেলে জাকিরের ভাই দোহাই দিয়ে পীঠ বাঁচিয়ে চলে। মানুষের নিকট পরিচয় দেয় সে আওয়ামী লীগ নেতা এবং এমপি রিমনের লোক। তাপস তার দলে গ্যাং বাড়িয়ে সন্ত্রাসী থেকে ধীরে ধীরে শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে উঠছে। ৬ মাস আগে আমার ছেলে জাকির হত্যা হওয়ার পরে তাপস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করছে। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করছে সে চলাফেরাও করে সেইসকল সন্ত্রাসীদের সাথে। সারাজীবন আওয়ামী লীগের জন্য জীবন শেষ করলাম এখন ভাইরফো তাপস হঠাৎ করে আমার চেয়ে বড় আওয়ামী লীগের নেতা জালাইছে। আসলে তাপস এখন ছোট্ট সন্ত্রাসী নয় সে এখন এ গ্রেডের সন্ত্রাসী। কাকচিড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সঠিক সার্টিফিকেট দিয়েছে তাপসকে। তাকে আরো বড় বড় সার্টিফিকেট দেয়া দরকার। তাপসের নামে এই সন্ত্রাসী প্রত্যায়নটি মেট্রিক পাশের সার্টিফিকেট স্বরূপ। তাপসকে সন্ত্রাসের ডিগ্রি স্বরূপ আইএ বিএ এমএ সার্টিফিকেট দরকার। তাপস আমার নিজের বসতভিটা থেকে আমাকে উৎখাতের পরিকল্পনা করছে। আমার ৩০ বছরের পুরাতন রান্নাঘর ভেঙে নতুন করে বিনির্মাণ করবো সেটাই করতে বাঁধা দিচ্ছে।.

আমার লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সাজানো বাড়িতে সন্ত্রাসী তাপস আমাকে থাকতে দিবে না। আমার হাতে পোতা বান্দা বাবার বাড়ি এবং আমার হাতে গাছ লাগানো বাগান তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে আমি আলাদা হয়ে নিজের চেষ্টায় বসতভিটা সাজিয়েছি। এতো বছর পরে এখন আমার বসত বাড়িতে নজর পড়ছে এই সন্ত্রাসীর। আমি পঙ্গু মানুষ তাই লোকের সামনে আমার ছোট ভাই বারেক আমাকে "তুই" বলে সম্বোধন করে। সন্ত্রাসী তাপস তার বাপ কাদের এক জোট হয়ে আমাকে চাইপ্পা ধরছে। বহু লোকজনের সামনে তাপস আমাকে ধমক দিয়ে চোখ রাঙিয়ে কথা বলে। তাপসের বাপ কাদের আমাকে "তুই" তুই ব্যবহার করে হুমকি দেয়। ছোট ভাই বারেক একটা পতিতা বিয়ে করে তাকে কাজিরহাট বাজারে রাখছে। পতিতার একটা ছেলে আমার সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলে। সেই ছেলেটাকে সাথে নিয়ে সন্ত্রাসী তাপস রাত দিন মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়ায়। গরু-ছাগলের চিকিৎসক আলমগীর অন্য ইউনিয়নের লোক, এরা মৌসুমের আওয়ামী লীগ। সে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেয় তাপস জাকিরের ভাই। সে চেনে কেমনে জাকিরের ভাই কে? জাকিরের ভাই তো একজন তার নাম বশির।".

এলাকার লোকজন অভিযোগ করে বলছেন বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার দলের সাংসদ শওকত হাসানুর রহমান রিমনের লোক পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করে গ্রামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে তাপস। তাপসের বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের রূপধন অঞ্চলের পশ্চিম জালিয়াঘাটা গ্রামে। বিখ্যাত সুদখোর কাদের হাওলাদারের ছেলে তাপস কখনো এমপির লোক কখনো আওয়ামী লীগ নেতা রূপ ধারণ করে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করলেও এখন পুলিশের হাতে গ্রেফতারের ভয়ে তার ভাই আওয়ামী লীগের নেতা ছিলো, সেই চাচাতো ভাইয়ের দোহাই দিয়ে রক্ষা পেতে চায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে এই সন্ত্রাসী তাপস ২০০০ সালের গোড়ার দিকে দুইবার পরীক্ষা দিয়ে কোনমতে এসএসসি পাস করে পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। সেসময়কার সরকার দলীয় সাংসদ বরগুনা জেলা বিএনপি সভাপতি নুরুল ইসলাম মনির সাথে যোগাযোগ রেখে এমপির প্রভাবে তাপস ২০০৫ সাল পর্যান্ত এলাকায় প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। বিএনপির সাংসদ নুরুল ইসলাম মনির ভাই জামাল এই তাপসের বাবাকে তখন সুদের ব্যবসা শিখিয়েছিলো। সুদের কারবারি করতে করতে একপর্যায়ে তাপসের বাবা কাদের হাওলাদার এলাকায় সুপরিচিত একজন সুদখোর হিসেবে পরিচিতি পায়। তাপসের বাবা কাদেরকে হতদরিদ্র একটি পরিবারের বেঁটে-ব্লাক বিয়ে করিয়ে সংসার তৈরি করে দিয়েছিলো। তাপসের মাকে মজিদ হাওলাদার বেঁটে ব্লাক নামেই ডাকে। মজিদ হাওলাদার তাপসের মাকে পরিবারপরিকল্পনা বিভাগে চাকুরী দিয়ে তাপস পরিবারকে আর্থিক ভাবে সচ্ছল করে। ধীরে ধীরে কাদের হাওলাদার সচ্ছল হলেও তার ছেলে তাপস লেখাপড়া বাদ দিয়ে স্কুল জীবন থেকেই হয়ে ওঠে বখাটে দস্যু।.

২০০৫ সালের পরে বিএনপি ক্ষমতা হারালে এই সন্ত্রাসী চাচাতো ভাই জাকিরের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে পদপদবির জন্য যোগাযোগ করে। জাকিরের চাচা কাদের চাচাত ভাই তাপস প্রকাশ্যে বিএনপির সন্ত্রাসী গ্রুপের লোক হওয়ায় জাকির চাচাতো ভাই তাপসকে এড়িয়ে চলতো। ৬মাস আগে জাকির হত্যা হওয়ার পরে তাপস নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর কারনে এলাকার বাসিন্দারা তাপসের নামে উপজেলার আওয়ামী লীগ ছাড়াও সকল সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে বরগুনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাপসের পরিচয় জানতে চাইলে তারা তাপসকে অচেনা লোক হিসেবে উল্লেখ করছে। তবে তাপসের নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন পল্টু তাপসকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে তাপসের নামে সন্ত্রাসের প্রত্যানয়ন পত্র দিয়েছে।.

পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবির হোসেন দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, তাপসকে আমরা চিনিনা। আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে সে কি ধরনের অপকর্মে যুক্ত আছে তা আমরা ক্ষতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। তাপসের উদাহরণ দিয়ে জাবির হোসেন বলেন এমন বহু তাপসেরা আছে যারা আওয়ামী লীগের বদনাম করার জন্য দলে প্রবেশ করে। এমন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ সর্বদা সতর্ক আছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয়-আন্তর্জাতিক সকল ফোরামে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে তার বিরুদ্ধে "জিরো টলারেন্স" নীতির পক্ষে মত দিয়েছেন এমন পরিস্থিতিতে পাথরঘাটা আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী তাপসদের মতো সন্ত্রাস মুক্ত কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই লোক কেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দেবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের পরামর্শ দেব। পুলিশের নিকট কেউ অভিযোগ দিলে আমি সুপারিশ করে তাপসকে গ্রেফতার করাবো। তাপসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বর্ননা লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে পরামর্শ দিয়ে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির হোসেন বলেন, সন্ত্রাসীদের অর্থ, অস্ত্রশস্ত্র ও নৈতিক সমর্থন না দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎপাটন করার সংকল্পে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে বাংলায় দেওয়া ভাষণে এই আহ্বান জানান। পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ অনুপ্রবেশকারি কিংবা সন্ত্রাসী কোন লোকের আশ্রয় দেয় না। জঙ্গি সন্ত্রাসের ব্যপারে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। কাকচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিষয়ে পদক্ষেপ নেব। আমি তাকে সুপারিশ করবো, প্রয়োজনে তাপসকে আইনের হাতে তুলে দিতে আমি পাথরঘাটা থানায় ওসির নিকট সুপারিশ করবো। .

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে পাথরঘাটা উপজেলার ৮টি শাখা আওয়ামী লীগের অফিসে তাপসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। রায়হানপুর ইউনিয়ন, নাচনাপাড়া ইউনিয়ন, চরদুয়ানী ইউনিয়ন, পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন, কালমেঘা ইউনিয়ন, কাকচিড়া ইউনিয়ন, কাঁঠালতলী ইউনিয়ন ও পাথরঘাটা পৌর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদকের নিকট অভিযোগ জমা দিয়ে তাপসের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছে ভুক্তভোগীরা। কাকচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন পল্টু বলেন তাপসকে আমি চিনি, সে আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার ডাকনাম তাপস হলেও কাগজপত্রে তার নাম জহির আলীম। লোকের কাছে শুনছি সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াও গ্রামের নানান অপকর্মের সাথে যুক্ত। তাপস বিএনপির কর্মী। তার মা পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী। ওর পিতা কাদের হাওলাদার গ্রামে সুদের ব্যাবসা করে। তিনি বলেন বিএনপির এক লোক কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। ফারুক হোসেন সেন্টু নামের সেই সদস্যের ছায়াতলে তাপস ছাড়াও কিছু দাঙ্গাবাজ জালিয়াঘাটায় মাদক এবং চোরাকারবারি করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোককে বহুবার অনুরোধ করছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। ইউনিয়ন সভাপতি বলেন লোকের কাছে শুনছি ইয়াবা চোরাকারবারির সাথেও যুক্ত আছে এই তাপস। কাকচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির প্যাডে লিখত উল্লেখ আছে- এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাইতেছে যে, কাকচিড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পশ্চিম জালিয়াঘাটা গ্রামের নিবাসী কাদের হাওলাদারের ছেলে মো: জহির আলীম তাপস বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কিংবা তার সহযোগী সংগঠনের কোথাও কোন পদে জড়িত নাই। তাহার নামে অভিযোগ সে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। তার অপকর্মের দায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওপর বর্তায় না।.

 .

সূত্র: সকালের সময়. .

ডে-নাইট-নিউজ /

অপরাধ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ