• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

কমলনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫৫ পিএম;
কমলনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না
কমলনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না

নানান কলা কৌশলে চলছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিস। ঘুষ গ্রহণ ছাড়া কোন ফাইল নড়ে না এই অফিসে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দালাল বেষ্টিত এই অফিসে প্রায় প্রত্যেক কাজে এ অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। ফলে সেবা প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন । দলিল লিখক সমিতির সূত্রে জানাযায় , কোন দলিল সৃজন করতে স্বাভাবিকভাবে দলিল মূল্যের উপর শতকরা ১০ থেকে ১২ টাকা হারে, ক্ষেত্র বিশেষে কম বেশি অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ কোটি টাকা মূল্যের দলিলে আদায় করা হয় ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। এ টাকার প্রায় অর্ধেক বিভিন্ন কর হিসেবে রাজস্ব খাতে যায়, বাকি টাকা দলিল লিখক ও দলিল লিখক সমিত , সাব - রেজিস্টার, সাব- রেজিস্টার  অফিসে কর্মরত সবাই ভাগ বাটোয়ারা করে  নেয়।.

ভুক্তভোগীদের আলোচনায় ঘুষ গ্রহণের নানান রকমের ফন্দি ফিকির ও হয়রানির চিত্র উঠে আসে। এই প্রতিবেদকের কাছে তারা জানান অফিসটিতে বেলা  ২টার পর দলিল রেজিস্ট্রি করতে হলে চুক্তি করতে হয়। চুক্তির পরিমাণ কমপক্ষে তিন হাজার টাকা। এ চুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে বিলম্ব মাশুল। সেবা গ্রহণ কারীর কাগজপত্রে ভুল থাকলে গুনতে হবে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া কোনো অজুহাত ছাড়াই অফিস সহকারীর টেবিলে ২ হাজার টাকা দিতে হয়। এমন কি টিপসই নেওয়ার সময়ও টাকা দিতে হয়।.

জানা যায় বিরোধী ভূমি রেজিস্টেশন এর প্রক্রিয়ায় আছে ব্যতিক্রম সব ব্যাপার স্যাপার। এ ধরনের ভূমি রেজিস্ট্রেশন হয় অজ্ঞাতসারে গোপনে অর্থাৎ বিরোধী  এক পক্ষের অজান্তে অন্যপক্ষ সাব রেজিস্টার অফিসকে ম্যানেজ করে কোন এক গোপন স্থানে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে । এক্ষেত্রে মোটা অংকের চুক্তি করা হয় । তবে এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন দালাল, দলিল লেখক ও অফিসে কর্মরত কোন একজন কর্মচারী। এ প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে কমিশন প্রক্রিয়া । এটি শুধুমাত্র শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিন্তু এখানে সক্ষম ব্যক্তিরাই ওই বিশেষ প্রক্রিয়া দলিল আদান-প্রদান সম্পন্ন করে থাকেন।.

কথা হয় উপজেলার চর ফলকন গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ নিরব তালুকদারের সাথে । তিনি বলেন, মেঘনার ভাঙ্গনে আমরা বাস্তুচ্যুত হই। মাথা গোজার জন্য পার্শ্ববর্তী চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের ঢাকায় বসবাসকারী মোঃ সেলিমের নিকট থেকে ২০১৯ সালে পুরনো একটি বাড়ি ক্রয়ের জন্য বয়ানা চুক্তি করি । জমির মালিকানা নিয়ে ঝামেলা থাকায় সেলিম রেজিস্ট্রি দিতে কালক্ষেপণ করেন। কিন্তু ২০২২ সালে সেলিম ঢাকা থেকে এসে স্থানীয় দালাল নুরুল আলম ও দলিল লিখক আকবর হোসেনের যোগসাজে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ম্যানেজ করে গোপনে নুরুল আলমের বাড়িতে কমিশন প্রক্রিয়ায় অন্যজনকে দলিল প্রদান করেন । আকবর এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অফিস না করলে তো দলিল হতো না। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিভাবে দলিল হলো জানতে চাইলে কোন সদুত্ত্য দিতে পারেনি সাব রেজিস্টার মোহাম্মদ আরমান।.

অনুরূপভাবে উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত মোহাম্মদ মুরাদ বলেন , আমরা উপজেলার চর জাঙ্গালিয়া মৌজায় ডালিম কুমার দাসের নিকট থেকে জমি ক্রয় করি। ডালিম কুমার স্ব-শরীরে গিয়ে রেজিস্ট্রি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় আমাদেরকে ২৮ হাজার টাকা চুক্তিতে কমিশন করে দলিল নিতে হয়েছে । যদিও দাবি ছিল ৬০ হাজার টাকা । অবশ্য এ দলিলের বিষয় ডালিম কুমারের ওয়ারিশদের আপত্তি ছিল।.

এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা থেকে দলিল রেজিস্ট্রি দিতে আসা মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, নামে ভুল থাকায় দলিল লিখন মাওলানা মোঃ হোসেন জানালেন ভুল সংশোধনীর জন্য চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন। প্রত্যয়ন পত্র আনার পর দাবী করলেন ১০ হাজার টাকা । কি জন্য এ টাকা জানতে চাইলে বলেন সাহেব(সাব- রেজিস্টার )বলেছেন। পরে দশ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে দলিল সম্পন্ন করতে হয়েছে। আবার চর মার্টিন ইউনিয়নের মাকছুদুর রহমান জানান আমি দলিল রেজিস্ট্রি নেওয়ার জন্য কমলনগর সাব -রেজিস্ট্রি অফিসে আসি সকাল ১০টায়।সাব-রেজিস্টার আসলেন বেলা ১২ টায় । আমার দলিল রেজিস্ট্রার জন্য তোলা হয় দুপুর ১ টায়। পরে আমাকে জানানো হয় ১টার পর দলিল করতে হলে বিলম্ব মাশুল দিতে হয় ৩ হাজার টাকা ।আমি ২হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। তিনি আরো বলেন সাব রেজিস্টার সপ্তাহে মাত্র দুই দিন অফিস করেন( রবি ও সোমবার ) ।.

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে সাব - রেজিস্টার মোহাম্মদ আরমান বলেন, নিয়মের ভিতরে থেকে কাজ করতে গেলে আমি সপ্তাহে ১০ টি রেজিস্ট্রি ও সম্পন্ন করতে পারবোনা । সে ক্ষেত্রে দলিল লেখক ও সেবা গ্রহীতা আমার উপর ক্ষেপে যাবে। তাছাড়া সবাই অনিয়ম দেখে , কিন্তু আমি জনস্বার্থে অনেক ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ সম্পন্ন করি। তা কেউ দেখে না। আলাপের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, যা কিছু রটে কিছু না কিছু বটেই! সপ্তাহে দুইদিন অফিসে উপস্থিত থাকেন কেন জানতে চাইলে বলেন দলিল কম, তাই।.

প্রতি লাখে ১০-১২ হাজার টাকা আদায় , কমিশনের নামে মোট অংকের ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে যারা রেজিস্টার লোকমান হোসেন বলেন আয়কর, স্থানীয় সরকার করসহ সরকারি ফি ছাড়া অন্য কোন ফি নেওয়ার বিধান নেই। তিনি আরো বলেন ,সকল অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পূর্ব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।. .

ডে-নাইট-নিউজ / নাসির মাহমুদ (লক্ষ্মীপুর জেলাপ্রতিনিধি):

অপরাধ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ