
সাইমুন নিয়াত, ডে-নাইট নিউজ : দেশের অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) খাতে আবারও গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এবার জনপ্রিয় টিকেটিং পোর্টাল ‘ফ্লাই ফার ইন্টারন্যাশনাল’ বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।ফ্লাইট এক্সপার্টের পর গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে ফ্লাই ফার ইন্টারন্যাশনাল
আকর্ষনীয় ছাড়ে বিমান টিকিট, হোটেল বুকিং এবং ভ্রমণ প্যাকেজের লোভ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।সেরা ট্যুর প্যাকেজ
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকেই প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা প্রধান কার্যালয় বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের ওয়েবসাইট (flyfar.com) অকার্যকর এবং কাস্টমার কেয়ারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। শত শত গ্রাহক তাদের বুকিং করা টিকিট বা প্যাকেজের কোনো তথ্য না পেয়ে এবং টাকা ফেরত পাওয়ার উপায় না দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, আসন্ন ছুটির মৌসুমকে কেন্দ্র করে ফ্লাই ফার ইন্টারন্যাশনাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় গন্তব্যের জন্য অবিশ্বাস্য ছাড়ে প্যাকেজ ও টিকিটের বিজ্ঞাপন দেয়। এই বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে শত শত গ্রাহক তাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে টিকিট বা চূড়ান্ত কাগজপত্র না পাওয়ায় গ্রাহকরা তাদের অফিসে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। মঙ্গলবার থেকে আকস্মিকভাবে অফিস, ওয়েবসাইট এবং ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়ায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন, ‘ফ্লাই ফার ইন্টারন্যাশনাল’, ‘ফ্লাই ফার ট্রিপস’ এবং বিশেষ করে নারী ভ্রমণকারীদের জন্য তৈরি করা জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ‘ফ্লাই ফার লেডিস’—এই তিনটিই মূলত একই কোম্পানির ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ। খুব অল্প সময়ে, বিশেষ করে নারী ভ্রমণকারীদের মধ্যে ‘ফ্লাই ফার লেডিস’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং আস্থা অর্জন করেছিল। গ্রুপ ট্যুর এবং নিরাপদ ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নারী গ্রাহকদের একটি বড় অংশকে আকৃষ্ট করে। অনেক নারীই তাদের ভ্রমণের আদর্শ হিসেবে ‘ফ্লাই ফার লেডিস’-এর উদাহরণ দিতেন। সেই আস্থার জায়গাতেই এখন প্রতারণার অভিযোগ ওঠায় গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ এবং হতাশা সবচেয়ে বেশি।সেরা ট্যুর প্যাকেজ
ভুক্তভোগী একজন গ্রাহক, যিনি সপরিবারে দুবাই ভ্রমণের জন্য প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছিলেন, তিনি বলেন, “তাদের ফেসবুক বিজ্ঞাপনে বিশাল ছাড় দেখে আমি প্যাকেজটি কিনি। তারা আমাকে বলেছিল ভ্রমণের ৭ দিন আগে টিকিট ও হোটেল ভাউচার দেওয়া হবে। কিন্তু এখন তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের সব পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে গেছে এবং জমানো টাকাটাও খোয়া গেল।”সেরা ট্যুর প্যাকেজ
দেশে ওটিএ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে ফ্লাইট এক্সপার্ট, ‘২৪ টিকিট ডট কম’ এবং ‘ফ্লাইটবুকিং ডট কম’ সহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একই ধরনের প্রতারণা করেছে। বারবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।.
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর এক নেতা জানান, অনেক ওটিএ কোনো ধরনের লাইসেন্স বা অনুমোদন ছাড়াই শুধুমাত্র একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে, যা এই খাতের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। তিনি বলেন, “এই ধরনের প্রতারণা পুরো ট্রাভেল শিল্পের প্রতি মানুষের আস্থাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে বারবার বলেছি যেন এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হয়।”সেরা ট্যুর প্যাকেজ
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ইতোমধ্যে পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই ঘটনা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল গ্রাহকদের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।.
এর আগে ই-কমার্স খাতে ই-অরেঞ্জ বা ধামাকার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও ছাড়ের লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অগ্রিম সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করে এক পর্যায়ে উদ্যোক্তারা লাপাত্তা হয়ে যান। বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্লাইট এক্সপার্টের ঘটনাটি সেই তিক্ত ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি। এটি প্রমাণ করে, শুধু ই-কমার্স নয়, যেকোনো খাতেই কঠোর নজরদারি ছাড়া অগ্রিম টাকার ব্যবসা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ফ্লাইট এক্সপার্টের পতনের পর এখন শেয়ারট্রিপ, গো জায়ান, ট্রাভেলজু বা অন্য প্রতিষ্ঠিত ওটিএগুলোর ওপর গ্রাহকরা কীভাবে ভরসা রাখবেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। যেহেতু প্রায় সব ওটিএ অগ্রিম টাকা ছাড়া বুকিং নেয় না, তাই একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার দায় এখন পুরো শিল্পকে বহন করতে হচ্ছে। ফ্লাইট এক্সপার্টের মত উধাও হয়ে যাওয়ার তালিকা আরও বাড়তে পারে ।.
‘ফ্লাই ফার ইন্টারন্যাশনাল’-এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাদের অফিসিয়াল নম্বরগুলোতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এই পরিস্থিতিতে, যারা অগ্রিম টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছেন বা ট্যুর প্যাকেজ কিনেছেন, তারা তাদের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।.
.
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: