
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্দিরগঞ্জ থানা আওতায়ধীন গোদনাইল ধনকুন্ডা এলাকায় মসজিদের লুন্ঠিত রড জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হুমায়ুন কবির (উপ-পুলিশ পরিদর্শক) সাহসীকতার পরিচয় দিয়ে তারই নেতৃত্বে ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতায় তিন টন রড উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।.
এসআই হূমায়ুন কবির ডে নাইড নিউজ কে ঐ রাতের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ১৫ই আগষ্ট আনুমানিক রাত তখন তিনটা সাড়ে তিনটা হবে আমরা গোদনাইল ধনকুন্ডা এলাকায় টহল ডিউটিতে ছিলাম তখন আমার এক সহযোগী অফিসার আমাকে ফোন দিয়ে জানায় একটি ট্রাক খুব দ্রুত গতিতে টেনে যাচ্ছে স্যার আমার সন্দেহ লাগছে।.
তার কথা শুনে আমি সাথে সাথে আমার বাকি সহযোগীদের নিয়ে উল্টো রোডে মানে যে রোডে ঘটনা ঘটছে তার বিপরীত রোডে আমি যাচ্ছি এবং ঐ ট্রাকটি কে ধরার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগীতা নিয়ে একটি কৌশল করি যে, আমাদের সহযোগী হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা রাতে জনগণের জান মাল নিরাপত্তার দায়িত্ব কর্মরত রয়েছে সেই টিমগুলোর সহযোগিতা নিয়ে জালকুড়ি একটি টিম, চিটাগাং রোড একটি টিম কে বিষয়টি অবগত করি।.
এবং আমি বাকি সদস্য দের নিয়ে ঐ ট্রাকটি কে জালকুড়ি ও গোদনাইল এলাকায় অনুসরন করি কিন্তু ট্রাকটি আমাদের গাড়ি কে চাপা দিতে চায় কয়েকবার তখনই আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হই যে, তারা হয় তো কোন অপরাধ করে পালিয়ে যাচ্ছে। এর পর দীর্ঘ একটি সময় ধরে জালকুড়ি ক্যানেল পাড় হয়ে তাদের অনুসরণ করে ধনকুন্ডা আবাসিক এলাকার ক্যানেল পাড়ে বালুর স্তুপের কাছে গাড়িটি রেখে পাচঁ থেকে ছয়জন ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ছুড়ি দিয়ে ডাকাত দল আমাদের আঘাত করার চেষ্টা তখন আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে কৌশলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি।.
কয়েকজন সাথে সাথে পালিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে কয়েকজন ডাকাত পালিয়ে যাওয়ার সময় জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে দুইজন ডাকাত সহ পুরো মালামাল উদ্ধার করতে সক্ষম হই আমরা। ঐ মুহূর্তে আমাদের অফিসার ইনচার্জ স্যার ও সার্কেল মহোদয় কে ঘটনাটি অবগত করি এবং তারা আমাকে ধন্যবাদ জানায় এবং আমাদের সবাইকে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে অত্যন্ত সচেতন হয়ে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করে ।.
১৫ আগস্ট এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন মসজিদ কমিটির সদস্য মো. আইয়ুব আলী সরদার। মামলা থেকে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ধনকুন্ডা পশ্চিমপাড়া বায়তুল আকসার জামে মসজিদের সামনে নির্মাণ কাজের জন্য ৩ টন রড রাখা ছিল। ১৫ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন ডাকাত নৈশ প্রহরীদের হাত পা বেঁধে ধারালো ছোরার ভয় দেখিয়ে রডগুলো নিয়ে যায়।.
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ও সোর্সের দেওয়া তথ্য মতে, এতে জড়িত পটুয়াখালীর শেয়াকাঠির মান্নাফের ছেলে কামাল (৪০), শরীয়তপুরের ডামুড্যার মৃত ফজিলে করিম ব্যাপারীর ছেলে হারুন বেপারীকে (৪৫) ধনকুন্ডা মুসলিম নগর আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় লুণ্ঠিত রড, ২টি ধারালো চাকু, ১টি কাটারসহ ডাকাতদের ব্যবহৃত একটি ৫ টনি বেড ফোর্ড ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট- ০৬-০২৭৭) উদ্ধার করা হয়।.
তিনি বলেন, ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ডাকাত কামাল (৪০) ও হারুন বেপারী (৪৫) স্বীকার করে যে, তারাসহ আরও ৫ জন এ ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগেও ৬ জুন কালুহাজী রোড পাটনদীরপাড় জনৈক মো. আলতাফ হোসেনের নির্মানাধীন ভবনের নীচ তলা থেকে আলতাফ হোসেনের পার্টনার মাসুদের হাত পা লুঙ্গি ও গামছা দিয়ে বেঁধে ৪ টন রড ডাকাতি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন তেঘুরি স্কুলপাড়া সাকিনে রাস্তার পাশে বিক্রির উদ্দেশ্যে রেখে দেয়।.
‘পরবর্তীতে ৭ আগস্ট ওয়াপদার পুল এনায়েতনগর লাকি রাজারস্থ নীট ফেয়ার লিমিটেডের গার্মেন্টসের সামনে থেকে নৈশ প্রহরীদের হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ৮ টন রড ডাকাতি করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পূর্বের স্থানে রেখে দেয় এবং সেখান থেকে কিছু রড বিক্রি করে ডাকাত সদস্যরা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। এসব ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি ডাকাতি মামলা রয়েছে। ’ বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। .
নাজমুল হাসান আরও বলেন, গ্রেফতার ডাকাতদের সঙ্গে নিয়ে তাদের দেওয়া তথ্যমতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ১৬ আগস্ট লুণ্ঠিত আনুমানিক ৬ টন রড উদ্ধার করা হয় এবং ডাকাতির রড ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িত গাজীপুরের টঙ্গীর সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে সাইদুর রহমান মানিক (৩৫) ও পুবাইলের আহদান উল্লাহ সরকারের ছেলে রোমাজ্জল হোসেন জামালকে (৩৭) গ্রেফতার করা হয়।.
তিনি জানান, গ্রেফতার ডাকাতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাহারা দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাসহ গাজীপুর, ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় একই কায়দায় ডাকাতি করে আসছিল। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে।.
সাক্ষাৎকার এর পরিশেষে হুমায়ুন কবির ( উপ-পুলিশ পরিদর্শক ) বলেন আলহামদুলিল্লাহ্ এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব টি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আমরা পুরোটিম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালন করায় আমাদের শ্রদ্ধেও অফিসার ইনচার্জ স্যার জনাব মশিউর রহমান (পিপিএম বার) আমাকে পুরস্কার প্রদান করে যা আমার কর্মময় জীবনে অনেক বড় একটি অর্জন এবং আমার কাজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আরো বেড়ে যায় বহুগন। আমি শ্রদ্ধেও প্রিয় অফিসার ইনচার্জ স্যার সহ সকল উর্ধ্বতন স্যারদের প্রতি কৃতজ্ঞ আমাকে কাজে উৎস দেওয়ার জন্য। সর্বশেষ একটি কথাই বলবো এই ডাকাত দল কে সফলভাবে গ্রেফতার করার ক্রেডিট আমাদের পুরো টিম সদস্যদের। .
সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ পুলিশ প্রতিনিয়ত অত্যন্ত দক্ষতা, নিষ্ঠাবান ও কর্তব্যপরায়ণ হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে। তারা মাদক, সন্ত্রাস, ইফটিজিং, ডাকাতি, ছিনতাই, কিশোর গ্যাং, জঙ্গিবাদ সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড চ্যালেঞ্জ এর সাথে সফলভাবে মোকাবিলা করে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ পুলিশ। .
ডে-নাইট-নিউজ / সূর্য আহমেদ মিঠুন, বিশেষ প্রতিবেদক:
আপনার মতামত লিখুন: