
.
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতাঃ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সালে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এরপর আরো ছয় মাস মেয়াদ বাড়িয়ে সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এতে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় তিন গুণ বাড়িয়ে ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের ৪৮ কিলোমিটার ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি ২০২১ সালের। তবে গতকাল রবিবার (১৭ আগস্ট) পর্যন্ত একটি উপজেলারও ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করতে পারেনি ঝিনাইদহ ও যশোরের জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। অধিগ্রহণের তালিকাভুক্তদের নানা অভিযোগ ও আপত্তি উপেক্ষা করেই গত ৮ আগস্ট ভূমির দাম নির্ধারণ করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে ভুক্তভোগীরা তা প্রত্যাখ্যান করে মানববন্ধন করেছে। গত ১০ আগস্ট সকালে জেলার কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে তারা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন থেকে জমির সঠিক মূল্য দাবিসহ ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনৈতিক টাকা দাবি, হয়রানি ও বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়।.
.
এ মহাসড়ক ধরে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার পণ্য ও যাত্রীবাহী যান বেনাপোল, দর্শনা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। খুলনার সঙ্গে রাজশাহীর যোগাযোগের একমাত্র সড়কপথও এটি। মহাসড়কটির যশোর অংশে ২০ কিলোমিটারজুড়ে তৈরি হয়েছে গর্ত। ঝিনাইদহ অংশের ২৮ কিলোমিটারের অধিকাংশ স্থানেও পিচ উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব স্থানে ইটের সলিং দিয়ে কোনো রকমে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে রাখা হয়েছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের মোট বরাদ্দের অর্ধেক জমিই অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে সরকার পরিবর্তনের কারণে সময়মতো কাজ শুরু করা যায়নি।.
.
এ ব্যাপারে প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যার অর্ধেকই ছিল জমি অধিগ্রহণ ব্যয়। তবে সরকার পরিবর্তন হওয়ার কারণে আমরা সময়মতো কাজ শুরু করতে পারিনি। আবার জমিও ঠিকমতো অধিগ্রহণ করা যায়নি। এ কারণে প্রকল্পটি পুনর্মূল্যায়ন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। কেননা নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাবে। সেখান থেকে সাড়া পেলে সড়কটির কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করা হবে।’ সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উইকেয়ার প্রকল্পের আওতায় ছয় লেন প্রকল্পে সড়কটি তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ থেকে সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প উইকেয়ারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সওজের ঝিনাইদহ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত বছর বর্ষায় রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। এখন মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ঢালাই শুরু হয়েছে। সড়কটি এখন প্রকল্পের আওতায় চলে গেছে। এখানে আমাদের পক্ষ থেকে নতুন করে কিছু করার নেই।’.
.
সরজমিন দেখা গেছে, যশোরের পালবাড়ি থেকে চুড়ামনকাটি পর্যন্ত আট কিলোমিটার পুরোটাই ভাঙ্গ। ঝিনাইদহের অংশে বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থান ভেঙ্গে গেছে। বিষয়খালী এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে ইটের সলিং দেয়া রয়েছে। বাকি সড়কের বেশির ভাগ স্থানে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। স্থানীয়রা বলছেন, এক বছর সড়কটির এ অবস্থা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিছু স্থানে ইট বিছিয়ে দিয়েছে। তবুও চলাচলের উপযোগী হচ্ছে না। বড় গাড়িগুলো সড়কে চলাচল করলেও গর্তে পড়ে মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে যাচ্ছে। পালবাড়ি থেকে চুড়ামনকাটি পর্যন্ত সড়কের একাধিক স্থানে ইট বিছানো হয়। কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হয় না।.
.
এ ব্যাপারে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের উইকেয়ার ফেজ-১-এর উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক-১ নিলন আলী বলেন, ‘পানির সংস্পর্শে এলে বিটুমিনাস সারফেস (বিটুমিন বা অ্যাসফল্ট দিয়ে তৈরি রাস্তার পৃষ্ঠ) নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে বর্ষায় রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। যেখানে বেশি সমস্যা ছিল, সেখানে ইট বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন বৃষ্টি কমছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাস্তার সংস্কারকাজ শুরু হবে। তাছাড়া রাস্তার পাশের জমি এখনো অধিগ্রহণ শেষ হয়নি। ছয় লেন সড়কের জন্য আমরা এখনো জমি পুরোপুরি বুঝে পাইনি। এজন্য কাজে ধীরগতি রয়েছে।’. .
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: