• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২১ আগষ্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

নার্সের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ, নার্সের শাস্তির দাবিতে হাসপাতাল ঘেরাও


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০১ ফেরুয়ারী, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫৯ পিএম;
নার্সের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ, নার্সের শাস্তির দাবিতে হাসপাতাল ঘেরাও
নার্সের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ, নার্সের শাস্তির দাবিতে হাসপাতাল ঘেরাও

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সাবিনা ইয়াসমিন নামের কর্তব্যরত এক নার্সের অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় মো. দুলাল (৩৯) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।.

এদিকে এই ঘটনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতাল ঘিরে ধরেন এবং প্রতিবাদ জানিয়ে ওই নার্সের শাস্তির দাবি জানান। নিহত দুলাল পৌরএলাকার উত্তর সুজাপুর ঘাটপাড়া গ্রামের মোস্তাব উদ্দিনের ছেলে।.

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন, পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটনসহ জনপ্রতিনিধিরা। পরে তারা বিক্ষুব্ধ জনতাকে আশ্বস্ত করেন। .

জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বুকে প্রচ- ব্যথা অনুভব করেন মো. দুলাল। পরে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে সকাল ৭ টা ৫ মিনিটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি করান। পরে দুলাল ব্যথায় ছটফট করতে থাকলের দুলালের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শিরিন বেগম কর্তব্যরত নার্স সাবিনা ইয়াসমিনকে বলেন চিকিৎসককে ডাকতে। এতে নার্স সাবিনা কর্ণপাত না করায় রোগীর স্বজনরা তাকে জোর করেন ডাক্তারকে ডেকে আনতে। কিন্তু তিনি রোগীর স্বজনদের বলেন আপনারা খুঁজে নিয়ে আসেন ডাক্তার কোথায় আছে। আমি পারবো না। এই বলে নার্স কক্ষ থেকে বেড়িয়ে যায়। আর কিছুক্ষণ পরেই মো. দুলাল নিস্তব্ধ হয়ে যান।.

দুলালের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শিরিন বেগম বলেন, আমার ভাসুরকে হাসপাতালে আনার পর থেকে হাসপাতালে তাকে কোনোপ্রকার চিকিৎসা প্রদান করা হয়নি। নার্স সাবিনাকে এতো অনুরোধ করার পরও তিনি ডাক্তারকে ডাকে আনেন’নি। তিনি উল্টো আমাকে বলেন ডাক্তার নাই, বড় ডাক্তার আসবেন তিনি দেখবেন। আর প্রয়োজন হলে আপনারা ডাক্তারকে খুঁজে আনেন। এই বলে ওই নার্স চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে আমার ভাসুর শ্বাস নেয়া বন্ধ করেন। বিনা চিকিৎসায় আমার ভাসুর মারা গিয়েছে। আমরা ওই নার্সের কঠোর শাস্তি চাই।.

নিহত দুলালের পাশের বেডের আরেক রোগী মো. মাসুম বলেন, আমি গত দুইদিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছি। বৃহস্পতিবার সকালে ওই রোগীটি বুক ব্যথা নিয়ে ছটফট করছিল আমার পাশের বেডে। তার পরিবারের লোকজন কর্তব্যরত নার্সকে ডেকে ডাক্তারকে ডাকতে অনুরোধ জানান। কিন্তু নার্স সেটি না করে উল্টো রোগীর স্বজনদের বলেন যান আপনারা ডাক্তারকে খুঁজে নিয়ে আসেন। এখানকার নার্সদের ব্যবহার এতো খারাপ যা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ এর ভুক্তভোগী। আমরা এই হাসপাতালের ওপর স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের নজরদারি জন্য অনুরোধ জানাই। .

আরেক রোগী সুমন কুমার কু-ু বলেন, গত পরশু আমার পেশার ২০০ এর কাছাকাছি। আমি হাসপাতালে আসলে আমাকে ভর্তি করানো হয়। একই সমস্যা নিয়ে সকালে ভর্তি হন মো. দুলাল। তিনি আমাদের সামনেই বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন। এতো করে নার্সদেরকে অনুরোধ জানানোর পরও তারা ডাক্তারকে ডাকেননি। আজ দুলাল এর সাথে আমার এই অবস্থা হলে আমিই আজ মারা যেতাম। এখানের নার্সদের ব্যবহার এতো জঘন্য তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তারা অর্থশালী বা প্রভাবশালীর সাথে অনেক ভালো আচরণ করেন। কিন্তু সাধারণ মানুষদেরকে তারা মানুষ মনে করেন না। এদের একটা বিহিত হওয়া উচিৎ।.

আরেক রোগীর স্বজন মোছা. মুন্নি বেগম বলেন, আমার এক রোগী নিয়ে আমি হাসপাতালে আছি। আজ সকালে দুলাল নামের একটা রোগীকে ভর্তি করানো হয়। তারপর রোগী বুকের ব্যথায় ছটফট করছিল। পরে নার্সকে ডাকা হলে নার্স আসেন ওই রোগীকে বলে আপনার চিকিৎসা করা হয়েছে। আপনাকে যে ওষুধ দেয়া হয়েছে তা খান এই বলে তিনি চলে যান। তারপর রোগীর স্বজনরা আরেক নার্সকে বললে তিনি বলেন, ডাক্তার খুজে নিয়ে আসেন আপনারা। তখন রোগীর স্বজনরা ভালোভাবে কথা বলতে বললে তিনি বলেন আপনাদের কাছে আমাকে ব্যবহার শিখতে হবে? এভাবে তিনি খারাপ ব্যবহার করে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পরে রোগীটি মারা যায়।.

অভিযুক্ত নার্স সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, দুলাল নামের রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে অন্ত:বিভাগে ভর্তির জন প্রেরণ করা হয়। ভর্তি স্লিপ অনুযায়ী রোগীকে ৩নং বিছানায় (বেড) দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওই রোগীকে প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স সুরাইয়া আক্তার। কিছুক্ষণ পরেই রোগী সঙ্গে থাকা লোকজন অভিযোগ করেন ওষুধ খাওয়ানোর পর রোগী অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেল কেন? তখন তাদের বলা হয় চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এসময় রোগীর লোকজন বিভিন্নভাবে চেচাচেচি শুরু করেন। তবে নার্সদের পক্ষ থেকে কোনো গাফিলাতি ছিল না।.

কর্তব্যরত নার্সিং সুপারভাইজার বিলকিস বেগম বলেন, বিষয়টি আমরা ঠিক জানা নাই কি ঘটেছি। তবে নার্সরা এমন ব্যবহার করার কথা না। দেখি যদি কেউ খারাপ ব্যবহার করে থাকে তারসাথে কথা বলা হবে। কে কে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালন করছিলেন তা জানার জন্য তাকে হাজিরা খাতা দেখে নাম দিতে বলা হলে তিনি বলেন, আমার কাছে খাতা নাই। খাতা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে আছে বলে তিনি এড়িয়ে যান। .

ফুলবাড়ী পৌরসভার প্যানেল মেয়র মামুনুর রশীদ বলেন, ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। চিকিৎসক ও নার্সদের গাফিলাতির জন্য দুলালের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিক্ষুদ্ধ লোকজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘেরাও করেছিল। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরাজমান অনিয়মগুলো দূর করা না হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।.

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, আমি তো বিভাগীয় স্বাস্থ্য কমন্বয় সভায় অংশগ্রহণের জন্য খুব সকালেই দিনাজপুর চলে এসেছি। বিষয়টি শুনেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় এ বিষয়ে বিকেল ৫টায় উভয় পক্ষ নিয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকে বসলে জানা যাবে কার কতটুকু দোষ আছে। সে অনুযাযী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।.

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্তকর্তা জরুরি কাজে দিনাজপুর থাকায় বিকাল ৫টায় এবিষয়ে আলোচনায় বসা হবে এবং বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। .

.

ডে-নাইট-নিউজ / প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

সারাদেশ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ