
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের লালদীঘি হাসিমপুর (লালদীঘি রোকেয়ার মোড়) থেকে ইসলামইলপুর (পাকাপান) পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক। ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পাকাকরণ কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাফা এন্ড সিনহা এন্টারপ্রাইজ। তাগিদ দেয়ার পর সড়কটির মাটি খনন (বক্স কাটিং) করেই লাপাত্তা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। বর্ষাকালে প্রায় দুই মাস পূর্বে খনন করা লাল মাটির সড়কটি এখন পুরোই কাঁদায় ভরা। সড়কটি দিয়ে হেঁটেও চলাচল করা যেনো দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে দুর্ভোগ বেড়েছে চার গ্রামের কৃষক, শিক্ষার্থীসহ ১২জন প্রসূতিকে।.
গত ২২ জুন উপজেলা প্রকৌশলী ৭ দিনের মধ্যে নীলফামারীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাফা এন্ড সিনহা এন্টারপ্রাইজকে মালামাল মজুদসহ সড়কটির কাজ শুরু করার নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।.
জানা যায়, এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান, দাসপাড়া জুজারপুর, পার্বতীপুর ও গৌরীপাড়া চারগ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়া এক কিলোমিটার কাচা সড়কটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পাকাকরণের কাজ শুরু হয়। ভেকু দিয়ে গত ১২ মে সড়কটি খনন করেই লাপাত্তা হয়ে যায় ঠিকাদার। ওয়ার্ড মেম্বারসহ এলাকাবাসী একাধিকবার ফোনকল করলেও খোঁজ মিলেনি ঠিকাদারের।.
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো সড়কটি লাল মাটির। সামান্য বৃষ্টিতে কাঁদায় পিচ্ছিল হয়ে যায় সড়কটি। ফলে যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও কাদায় একাকার ওই রাস্তায় চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বিকল্প সড়ক না থাকায় কষ্ট করেই কর্দমাক্ত ওই রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে চারগ্রামবাসীকে। অসীম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষক, শিক্ষার্থীসহ ১২জন প্রসূতিকেও।.
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অফিসের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৪ মার্চ সড়কটি নির্মাণকাজের চুক্তি স্বাক্ষর করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। যা ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর কাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বরে কাজ সম্পন্ন হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও কাজ শুরু না করায় গত ১৬ মার্চ কাজ শুরু করতে তাগিদপত্র প্রদান করা হয়। পত্রটি প্রাপ্তির পর গত ১২ মে সড়কটি বক্স কাটিং করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। তারপর থেকেই ঠিকাদারের খোঁজ মিলছে না। খনন হওয়া সড়কটি বৃষ্টির পানিতে চলাচলের অনুপযোগী হলে গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে গত ২২ জুন উপজেলা প্রকৌশলী স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সাত দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।.
দুর্ভোগে শিকার গ্রামবাসী ননীগোপাল রায়, মদন রায়, গোপলা রায়, রিপন চন্দ্র ও জাকির হোসেন বলেন, ধান কাটাই মাড়াইয়ের সময়ে সড়কটি খনন করে ঠিকাদার। খনন করার প্রায় দুইমাস হলেও আর আসেনি ঠিকাদার। একাধিকবার এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বার ওই ঠিকাদারকে ফোন দিলেও ফোন ধরেনা। বর্ষা মৌসুম এখন। সড়কটি কাদামাটিতে একাকার হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটিতে যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটেই চলাচল দুস্কর হয়ে ওঠেছে। গ্রামগুলোতে ভ্যানও ঢুকে না এখন। তাই বিকল্প সড়ক না থাকায় বাধ্য হয়ে কাঁদামাটি মেখেই স্কুল-কলেজে যেতে হচ্ছে গ্রামের শিক্ষার্থীদের। বেশি টাকা খরচ করে ধান/চাল বাঙ্কারাতে করে বহণ করতে হচ্ছে গৃহস্থদের। এছাড়াও বিশেষ সমস্যায় পোহাতে হচ্ছে ১২জন প্রসূতিকে। যেকোন সময় তাদের প্রসবের জন্য হাসপাতালে নিতে হবে কিন্তু সড়কের যে অবস্থা ভ্যানও জুটবে না। সড়কের বেহাল দশার কারণে গ্রামের মেয়ে-জামাইরাও আর আসতে চায় না। গ্রামবাসীর দাবি যেনো সড়কটির দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়।.
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাফা এন্ড সিনহা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. সম্রাটকে তার মুঠোফোনে (০১৭১৩-৯৩৭৩৩০) একাধিকবার ফোনকল করা হলেও তিনি ফোনকলটি গ্রহণ করেন'নি।.
ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর হোসেন বাবু ও ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার ফয়জার রহমান বলেন, ঠিকাদারকে ফোন করলেও পাওয়া যায়না। পরে উপজেলা প্রকৌশলীকে গ্রামবাসীর দুর্ভোগের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।.
উপজেলা প্রকৌশলী এফ.এ.এম. রায়হানুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু না করায় তাকে তাগিদ দেয়া হয়। পরে কাজ শুরু করলেও বক্স কাটিং করে আর কাজ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। পরে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৭ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়ে গত ২২জুন নোটিশ দেয়া হলেও, এখন পর্যন্ত নোটিশের উত্তর দেয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।.
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, জেনেছি ঠিকাদার নীলফামারীতে বড় প্রজেক্টের কাজ করছেন। তাই এই কাজে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করতে পারলে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
.
. .
ডে-নাইট-নিউজ / প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
আপনার মতামত লিখুন: