
.
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতাঃ ঝিনাইদহে নীতিমালা ভঙ্গ করে অর্থের বিনিময়ে ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে চলছে টিসিবি’র কার্যক্রম। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেয়া ডিলার নিয়োগে ছিল ব্যাপক অনিয়ম। ২০২৪ এর ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলেও অসাধু কর্মকর্তাদের অর্থ বাণিজ্যের কারণে বদলায়নি টিসিবি’র কার্যক্রম। সূত্র বলছে, নীতিমালা অনুযায়ী মুদি দোকান ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক না থাকলেও বিভিন্ন দলের নেতাদের চাপে ও অর্থের বিনিময়ে অনেক ডিলারই তদন্ত প্রক্রিয়ায় টিকে যাচ্ছে। .
.
প্রকৃত মুদি ব্যবসায়ী না হয়েও অন্যের দোকানে সাইনবোর্ড টানিয়ে ছবি তুলে জমা দিয়েছেন এসব ডিলাররা। আবার কোথাও কোথাও অর্থনৈতিক সুবিধা নেয়ার কারণে অনিয়ম খতিয়ে দেখেন না সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা। ঝিনাইদহে নীতিমালা ভঙ্গ করে এমপিওভুক্ত দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক হয়েছেন টিসিবি’র ডিলার, একই পরিবারের পিতা ও ছেলে হয়েছেন টিসিবি ডিলার। এ ছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঝিনাইদহ পৌর শাখার সভাপতি মো. খাইরুলের নামে ও সাবেক এমপি হাই সাহেবের পিএস রিয়াদ হোসেনের নামে টিসিবি’র ডিলারশিপ বহাল রাখা হয়েছে। অথচ রিয়াদের নিজস্ব কোনো মুদি দোকান নাই। নিজের বাসাতেই টিসিবি পণ্য বিতরণ করে থাকে। আর খাইরুল প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকায় ডিলারশিপ ভাড়া দিয়ে রেখেছে।.
.
সরজমিন দেখা যায়, চলতি আগস্ট মাসের এমপিওভুক্ত শিক্ষক হয়েও মেসার্স আলাউদ্দিন ট্রেডার্সের মালিক মো. আলাউদ্দিন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার টিসিবি ডিলারশিপ পেয়েছেন। এ ছাড়া তার ছেলে মো. মাহবুবুর রহমানের প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহবুবুর ট্রেডার্স নামেও রয়েছে টিসিবি ডিলার। টিসিবি’র নীতি মালায় রয়েছে একজন ব্যক্তির নামে সরকারের দুইটি প্রতিষ্ঠানের ডিলারশিপ থাকতে পারবে না। কিন্তু সততা ট্রেডার্সের মালিক মিরাজ জামান রাজের নামে ওএমএস এবং টিসিবি দুটি ডিলারশিপই আছে।.
.
চলতি মাসে ডিলারদের মধ্যে জেলা জুড়ে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৬৫ হাজার ১২০ জন। এর কার্ড নির্ধারণেও হয়েছে ব্যাপক বৈষম্য আর অনিয়ম। আগস্ট ২০২৫ মাসের টিসিবি’র ডিলার প্রতি উপকারভোগীর সংখ্যা নির্ধারণপূর্বক তালিকায় দেখা যায় কালীগঞ্জ উপজেলার মেসার্স মো. শাহাবুদ্দিন ট্রেডার্স একাই কার্ড পেয়েছেন ২১১৯টি, কালীগঞ্জ এর সেতু ট্রেডার্সের নামে হয়েছে ১৬৭১টি কার্ড, ঝিনাইদহের রঙ্গীলা স্টোর কার্ড পেয়েছেন ১৬৩০টি, মহেশপুরের আহমদ আলী পেয়েছেন ২২৪৬টি কার্ড, মেসার্স মামুন স্টোরের নামে হয়েছে ১৯৩১টি কার্ড। কোনো কোনো ডিলার একাই টিসিবি’র মালামাল দিচ্ছেন জেলার ৪ জায়গায়। অন্যদিকে ঝিনাইদহের সততা ট্রেডার্স পেয়েছেন মাত্র ৫৮০টি কার্ড, ঝিনাইদহের আরেক ডিলার রাসেল ট্রেডার্স পেয়েছেন ৫৮০টি কার্ড। অথচ ঝিনাইদহের পোড়াহাটি ইউনিয়নে মণ্ডল ট্রেড পেয়েছেন ১২৪৪টি কার্ড। .
.
এ বিষয়ে মেসার্স শাহাবুদ্দিন ট্রেডার্সের মালিক জানান, এসব খবর তারা বলতে পারবেন না। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে দেখভাল করা হয়। এ বিষয়ে ঝিনাইদহের টিসিবি’র ক্যাম্প অফিসের উপ-পরিচালক মো. আকরাম হোসেন জানান, কোনো ডিলারের অনিয়ম পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ ছাড়া ঝিনাইদহে নতুন ও পুরাতন ডিলারদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে আমরা সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবো। টিসিবি’র অনিয়মের বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, আমরা তদন্ত করে বেশ কিছু ডিলার বাদ দিয়েছি। এখনো তদন্ত চলছে। নতুন ডিলার এবং পুরাতন ডিলারদের নিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।. .
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: