• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

একাত্তরে জীবন দিল যে তিনজন


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: বুধবার, ১১ আগষ্ট, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:৩১ পিএম;
একাত্তরে জীবন দিল যে তিনজন
একাত্তরে জীবন দিল যে তিনজন

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ শুরু হয় পাকজান্তাদের নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক অত্যাচার নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর যা অকাট্য সত্য। পহেলা মার্চ ইয়াহিয়া খান নানান টালবাহানা শুরু করে বাংলাদেশের আপামর মানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একক সংখ্যা গরিষ্ট নেতার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্র।বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীর প্রাণশক্তি।শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে এদেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ল যুদ্ধে।বিভিন্ন ভাবে মন প্রাণ দিয়ে মানুষ লড়তে শুরু করল।কিভাবে শত্রুকে সোনার বাংলা থেকে তাড়িয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ ও লাল সবুজের পতাকা বিশ্ব মানচিত্রে স্থান দিতে।.

শুরু হল মুক্তিযুদ্ধ। লাখ লাখ মানুষের হল প্রাণহানি।অনেক মানুষকে পাকবাহিনী নির্বিচারে করল হত্যা।১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে করা হল শহীদ।তারই অংশ বিশেষ আমার আজকের লেখার পটভুমিকা। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ঐতিহ্যবাহী একটি ইউনিয়ন।মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সোলেমান এ ইউনিয়নেরই বাসিন্দা।আরো রয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত ব্যক্তি মরহুম হাফিজ, কারী মাওলানা আব্দুল করিম (র:) শায়খে কৌড়িয়া,অব:প্রাপ্ত কর্ণেল তৈয়বুর রহমান, বীর মুক্তিযুদ্ধা মরহুম কমান্ডার আব্দুন নুর, সিনিয়র রেঞ্জার মরহুম আব্দুর রহিম,প্রখ্যাত বাউল মরহুম চাঁন মিয়া প্রমুখ।.

একদিন পাক সেনারা আসে খাজাঞ্চী রেল ষ্টেশনে। এখানে এসে হোসেন পুর নিবাসী কটু মিয়ার ছেলে ছোয়াব আলীকে হাল চাষের কাজ থেকে ধরে নিয়ে রেলষ্টেশন সংলগ্ন টিউবওয়েলের কাছে গুলি করে মেরে ফেলে এবং ঐদিনই খলিল উল্লা পিতা মৃত রসিদ আলী গ্রাম হোসেন পুর নিবাসীকে ধরে আনয়ন করে এবং খলিল উল্লা মসজিদের নিকট এসে প্রশ্রাব করার কথা জানালে সুযোগ দেয় প্রশ্রাব করার। কিন্তু প্রশ্রাবে বসলে মসজিদের প্রশ্রাব খানায় বসা অবস্তায় গুলি করে মেরে ফেলে।এ দুই শহিদকে গ্রামবাসী সম্মিলিত ভাবে হোসেন পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে কবরস্থ করেন। স্বাধীন হবার ৮/১০ দিন পূর্বে আমার এক সহপাঠি হঠাৎ বলেন বেলা ২/৩ টার সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধা এসেছেন। আমাদের গ্রামের পশ্চিম দিকে এসে ভুলা গঞ্জ গ্রামে গিয়েছেন।.

মুক্তি যোদ্ধা দেখার জন্য দৌড়ে যাই সমবয়সী কয়েকজন বড়দের অনুসরণ করে। কিন্তু মুক্তি যোদ্ধারা আমাদের কাছে ঘেঁষতে দেননি। তাঁরা বলছিলেন এখনই আমরা গোলাগুলি আরম্ভ করব। সুতরাং সরে যাবার তাগাদা দিচিছলেন। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত কাজ করছিলেন যুদ্ধের প্রস্তুতির নিমিত্তে। ঘন্টা খানেক পর সত্যিই সেদিন গোলাগুলি আরম্ভ হয়ে যায়। তবে রাত প্রায় ন’টার দিকে আর শব্দ শুনা যায়নি। নতুবা দীর্ঘস্থায়ী হলে হয়ত আমরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র যেতে হত। কারন পর দিন জানতে পারি ভুলা গঞ্জ গ্রামের প্রয়াত সাবেক মেম্বার মন্তাজ আলীর স্ত্রী পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বেশ কিছুদিন অসুস্থ থেকে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। এসব শহীদরা সরাসরি যুদ্ধ করেননি।প্রশিক্ষণ নেননি।.

গ্রামের সাধারণ মানুষ।খেটে খাওয়া সাধারণ শ্রমিক, দিন মজুর।কেহবা ছিলেন সাধারণ একজন গৃহিণী।কিন্তু পাক সামরিক জান্তার কবল থেকে রক্ষা পাননি।ওরা স্থান পাননি স্বাধীন বাংলাদেশের কোন পদবী, পদ মর্যাদা, কোন সম্মান, সম্মানী।সুতরাং কষ্টার্জিত স্বাধীনতার প্রকৃত ও কাঙ্খিত সুফল পেতে হলে আমাদেরকে হতে হবে ঘুষ বিবর্জিত,নৈতিকতা সমৃদ্ধ মানুষ,সুসভ্য মানবজাতি,উন্নত মানসিকতা পূর্ণ, শান্তি প্রিয় মানুষ, হার্দিক মন ও মননশীল মানুষ।তবেই না বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও প্রত্যেক নাগরিকের প্রাপ্যতা অর্জন সম্ভব।নতুবা তা হবে সুদুর পরাহত। আমি স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত ও পরলৌকিক শান্তি কামনা করি মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট কায়মন বাক্যে নিরন্তর।.

লেখক মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক সভাপতি, বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ সিলেট।. .

ডে-নাইট-নিউজ / মিজানুর রহমান মিজান

ইতিহাসের পাতা বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ